মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিযোগিতা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কারণ কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সরাসরি বিতর্ক ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায়) মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজের আয়োজনে ফিলাডেলফিয়ার কন্সটিটিউশন সেন্টারে এ বিতর্ক শুরু হয়।
এসময় বিতর্ক মঞ্চে প্রবেশ করেই ট্রাম্পের দিকে এগিয়ে যান এবং হাত বাড়িয়ে দেন কমলা হ্যারিস। তারপর দুজন করমর্দন করেন এবং কমলার বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
উভয় নেতা গাজা যুদ্ধ, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, মূল্যস্ফীতি, অভিবাসন নীতি ও গর্ভপাতসহ নানা বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তবে কমলার সামনে পাত্তাই পাননি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শেষমেশ একপর্যায়ে কমলাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
বিতর্কের প্রথম প্রশ্নই ছিল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে। এই ইস্যুতে কমলা বলেন, তিনি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাই, তিনি তাদের কষ্ট বোঝেন। এজন্য মধ্যবিত্তদের জন্য কর কর্তনের পরিকল্পনার কথা জানান কমলা। আর ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে ধনীদের কর কর্তন করা হবে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে দেশটির ইতিহাসের সেরা অর্থনীতি বানিয়েছিলেন। আর মূল্যস্ফীতির জন্য বাইডেন প্রশাসনকেই দায়ী করেন তিনি।
ক্ষমতায় যেতে দুই নেতাই ইসরায়েলকে তোষণ করেছে। ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, কমলা ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। তিনি আরব জনগণকেও ঘৃণা করেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প। গাজা যুদ্ধ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধ হতোই না। এই যুদ্ধের সমাপ্তি হওয়া উচিত উল্লেখ করে কমলা বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে এটি কীভাবে করছে তা গুরুত্বপূর্ণ।
বিতর্কে বাইডেনকে অস্তিত্বহীন প্রেসিডেন্ট বলে কমলার তোপের মুখে পড়েন ট্রাম্প। ওই মন্তব্যের জের ধরে কমলা বলেন, নির্বাচনে আপনি বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, আপনি লড়ছেন আমার বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত প্রসঙ্গে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেন, আপনি এখন আর প্রেসিডেন্ট নেই- এতে আমাদের ন্যাটো মিত্ররা খুবই কৃতজ্ঞ। পুতিন ট্রাম্পকে সহজেই কবজা করে ফেলতেন বলেও উল্লেখ করেন কমলা।
অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে বাইডেন প্রশাসনে নিজের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন কমলা। তিনি বলেন, কংগ্রেসে এ নিয়ে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছিল, সেটিতে সমর্থন জানিয়েছিলাম। এর মাধ্যমে সীমান্তে আরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে, যা সীমান্ত এলাকা সুরক্ষা দেবে। তবে ট্রাম্প কড়া ভাষায় বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, দেশটির সীমান্ত দাগি অপরাধীদের জন্য খুলে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনা, গর্ভপাত, ট্রাম্পের বিতর্কিত বিভিন্ন মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন করা হয় বিতর্কে। এসব প্রশ্নের কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে ক্রেডিট নিয়েছেন ট্রাম্প। কিছু প্রশ্নের ক্ষেত্রে উত্তর দেওয়া এড়িয়ে গেছেন তিনি। বিতর্ক শেষে কমলা শিবিরের ধারণা এতে জয়ী হয়েছেন। ট্রাম্প শিবিরও একই ধরনের দাবি করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, কমলাই বিতর্কে এগিয়ে ছিলেন।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হবে। তাই দুই প্রার্থীর এই বিতর্ককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান এবিসি নিউজ। এ ছাড়া বিবিসি, সিএনএন, চ্যানেল ফোরসহ বিভিন্ন সম্প্রচারমাধ্যম বিতর্কটি সরাসরি সম্প্রচার করছে।
এ বিতর্কের কিছু নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। দুইটি বিরতিসহ ৯০ মিনিট চলবে বিতর্ক। একজন প্রার্থীর বক্তব্যের সময় বন্ধ থাকবে অন্যজনের মাইক্রোফোন। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিতে দুই মিনিট সময় পাবেন ট্রাম্প-হ্যারিস। যুক্তি খণ্ডনে দেয়া হবে আরও দুই মিনিট। বিতর্কটি সঞ্চালনা করছেন এবিসি কর্মকর্তা ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস। বিতর্ক চলাকালীন বাইরের কেউ প্রার্থীদের সাথে কথা বলতে পারবেন না, এমনকি বিরতি চলাকালেও না। কোন প্রার্থীই সাথে রাখতে পারবেন না কোনরকম চিরকুট।
এর আগে প্রথম বিতর্কে বাজে পারফর্ম্যান্স করে জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। ডেমোক্রেটদের নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রথমবারের টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
অনেকেই মুখিয়ে আছেন কমলা-ট্রাম্প বিতর্কের দিকে। বিশেষ করে কমলা কেমন করেন সেদিকে। ধারণা করা হচ্ছে ট্রাম্প তার স্বভাবসুলভ বাকচাতুর্য এই বিতর্কেও অব্যাহত রাখবেন। কমলাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবেন না তিনি।
নিউইয়র্ক টাইমসের সিয়েনা কলেজ পোল বলছে, প্রায় সমানে-সমান লড়াই হবে ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে। সংস্থাটির জরিপের তথ্য মতে, বিতর্কে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ৪৮ শতাংশ, আর ৪৭ শতাংশ পূর্বাভাসে তার কাঁধে নিশ্বাস ফেলছে কমলা।