একটি-দুটি নয়, রেলের পাঁচটি প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় কমানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে ব্যয় কমছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের ব্যয় কমানোর প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
বাকি প্রস্তাবগুলো পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১ হাজার ৪১ কোটি টাকা ব্যয় কমেছে আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পে। খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণে ব্যয় কমানো হয়েছে ৩৫১ কোটি টাকার বেশি। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে কমেছে ৬২ কোটি টাকা। দোহাজারি-ঘুমধুম ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে খরচ কমানো হয়েছে ৬ হাজার ৬৭ কোটি আর আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পে ১৫৫ কোটি টাকা।
খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১০ সালে। ওই বছর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে এর কাজ শুরু হয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি উন্নত করতে উদ্বোধনের সাত মাস পর খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হয় গত বছরের ১ জুন। ৯১ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর রেল যোগাযোগে যুক্ত হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা।
জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এর সময় ও ব্যয় দুটিই বাড়ানো হয়। তখন ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। পরে আরও দুই দফায় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় ধরা হয়। গত বছরের অক্টোবরে তৃতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় কমানো হয়েছে। খরচ কমেছে ৩৫১ কোটি টাকার বেশি।
আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে ১ হাজার ৪১ কোটি টাকা ব্যয় কমছে। গত বছরের জুলাইয়ে এই প্রস্তাব তৈরি করা হয়।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের একনেক সভায় আখাউড়া-লাকসাম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত বছরের ২০ জুলাই প্রকল্পটি উদ্বোধন হয়। এই প্রকল্পের পরিচালক মো. সবুক্তগীন কালবেলাকে বলেন, ব্যয় কমানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে রেলওয়ে। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পে’র আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেয়। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় কমানো হয়েছে ৬২ কোটি ১৮৯ লাখ টাকা।
সরকারের অন্যতম ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ। প্রকল্পটির মাধ্যমে এরই মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়াল গেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ তৈরি হয়েছে। তবে রামু-ঘুমধুম অংশ আপাতত বাস্তবায়ন করবে না রেলওয়ে। ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অংশের কাজ স্থগিত হওয়ায় প্রথমে কক্সবাজার রেল প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব রেলওয়েতে জমা দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ এবং বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা সংস্থান হয় সরকারি তহবিল থেকে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে রামু-ঘুনধুম অংশ বাদ দিয়ে নির্মাণ ব্যয় ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্পে প্রথম সংশোধনীতে ১৬৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছরের জুনে এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মিয়া বলেন, ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ রেলপথটির বাংলাদেশ অংশে আছে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় দাঁড়ায় ৩২২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এতে সাশ্রয় হয়েছে ১৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
২০১০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে দুদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। গত বছরের ১ নভেম্বর প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে।
রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ বাহার গণমাধ্যমকে বলেন, আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পের সংশোধনী ইতোমধ্যে পাস হয়েছে। বাকি প্রকল্পের সংশোধনী ব্যয় প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী উপদেষ্টা চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন।