এবার চাহিদাসম্পন্ন চালকে টার্গেট করে চট্টগ্রামে বাড়ানো হয়েছে দাম। গরিবের সম্বল মোটা চালে দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা। একই অজুহাতে প্রতিটি ডিমে বেড়েছে ২০ পয়সা।
এদিকে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পরিশোধিত চিনিতে বেড়েছে ১১৮ টাকা আর পাম অয়েলে নতুন করে বেড়েছে ৫০ টাকা। বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে এবার বন্যাকে দায়ী করেছেন ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে আগের কেনা পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফার পাঁয়তারা করছেন অনেক ব্যবসায়ী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগেও খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২৫০ টাকা বেড়ে মোটা সেদ্ধ চাল ২ হাজার ২৫০ টাকা, পাইজাম সেদ্ধ ৩ হাজার টাকা ও পাইজাম আতপ ২ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিনিকেট চালের বস্তায় ৩৫০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা, বেতি আতপ চালে ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি বস্তাপ্রতি জিরাশাইল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, নুরজাহান স্বর্ণা ২ হাজার ৫০০ ও গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে মোটা সেদ্ধ চাল, বেতি আতপ, গুটি স্বর্ণা ও নুরজাহান স্বর্ণা চালের দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে মোটা সেদ্ধ চাল ২ হাজার ৫০০ টাকা, বেতি আতপ চালে ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯০০, গুটি স্বর্ণায় ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ ও পাইজাম আতপ চালে ১৫০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে পাইজাম সেদ্ধ, জিরাশাইল ও মিনিকেট আতপ চাল। বর্তমানে বস্তাপ্রতি পাইজাম সেদ্ধ ৩ হাজার টাকা, জিরাশাইল ৩ হাজার ৪০০ ও মিনিকেট আতপ ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যার কারণে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া মিলাররা দাবি করছেন, ধানের দাম আবার বেড়ে গেছে। এখানে একটা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধানে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব কারণে চালের দাম বেড়েছে।
এদিকে খাতুনগঞ্জে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাম অয়েল ও পরিশোধিত চিনির দাম নতুন করে বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে মণপ্রতি ৫ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া পাম অয়েল বর্তমানে ৫ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ পরিশোধিত চিনিতে ১১৮ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ৪৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৫ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের বাড়তি দরে তেল, চিনি কিনতে হচ্ছে। আর এসব কারণে বেচাকেনা কম থাকা সত্ত্বেও পণ্যগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে পাহাড়তলী বাজারে গত মঙ্গল ও বুধবারে প্রতিটি ডিম ১১ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সেটি ১১ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। টাঙ্গাইলে আজ প্রতিটি ডিম ১১ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। একটি ডিমে ১০ পয়সা লাভ না করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে সবজির বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। পাইকারি সবজির বাজারেই প্রতি কেজি বরবটি মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ও কাঁকরোল ৫৫ টাকা, মেহেরপুর থেকে আনা কচুর ছড়া ৩০ টাকা ও যশোর থেকে আনা কচুর ছড়া ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি পটোল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৩, শসা ২৮ থেকে ৩০, লাউ ১৫ ও পেঁপে ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী গণমাধ্যমকে বলেন, অন্যান্য সবজির দাম কমতির দিকে আছে। শুধু কাঁকরোল, বেগুন ও বরবটির দাম বেড়েছে। মেহেরপুর, যশোর থেকে যে সবজিগুলো আসছে, সেগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নানা অজুহাতে আগের কেনা ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে একটি চক্র অতি মুনাফার পাঁয়তারা করছে। এটাকে ব্যবসা বলা ঠিক হবে না। কারণ ব্যবসার মধ্যে মুনাফার পাশাপাশি মানবিকতাও থাকতে হবে। প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বাজারে কঠোর মনিটরিং করতে হবে।
নাজের হোসাইন আরও বলেন, চালের ক্ষেত্রে মিলার থেকে খুচরা পর্যায় এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে কত টাকায় কেনা হলো এবং কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এসব খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।