পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে হঠাৎ জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় এই সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে বের হওয়ার সময় তিনি একথা জানান।
এ সময় সিইসির কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, আপনারা পদত্যাগ করছেন কি না? জবাবে সিইসি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কিছুই বলব না। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বলব।’
রাষ্ট্রপতি কিছু বলেছেন কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি আউয়াল বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) দেখা করতে বলেছেন।’
এদিকে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার কমিশনারের পদত্যাগ এখন সময়ের ব্যাপার। পদত্যাগের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন তারা।
সূত্র আরও জানিয়েছে, পদত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলন করতে চান সিইসি। এজন্য লিখিত একটি বক্তব্যের খসড়া নিজেই তৈরি করেছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনের পক্ষে নন অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। তারা সিইসিকে জানিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলনে তারা অংশ নেবেন না। সংবাদ সম্মেলনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে চান না।
আরও জানা যায়, নেপালে শুরু হওয়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর নির্বাচন কমিশনারদের সংগঠন ফেমবোসার অনুষ্ঠানে অংশ নেননি সিইসি। মঙ্গলবার তার নেপাল যাওয়ার কথা ছিল। ৬ সেপ্টম্বর দেশে আসার কথা। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে জিও জারি করা হয়। ওই জিও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিইসি। ইতোমধ্যে বাসার মালামাল সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা খানম তার ব্যবহার করা সরকারি ট্যাব জমা দিয়েছেন। তবে বিদায়ের আগমুহূর্তেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেননি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান। তার সরকারি লাল পাসপোর্টে ছয় মাসের জন্য সার্ক স্টিকার লাগিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, তাদের আরও কয়েকদিন দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা ছিল। ওই ইচ্ছার পক্ষে কমিশনারদের যুক্তি ছিল, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভোটগ্রহণের অন্তত ৪৫ দিন আগে তফশিল ঘোষণা করতে হয়। ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। ওই হিসাবে ২০ সেপ্টেম্বর নতুন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার কথা। তখন তফশিল ঘোষণা করতে না পারলে তারা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু নাগরিক ঐক্য ও গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নিবন্ধন দেওয়া নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোর কর্মী-সমর্থকদের মারমুখী আচরণে এখনই পদত্যাগ করতে চান সিইসি। মঙ্গলবার কমিশনারদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সিইসি তার এ অভিব্যক্তি জানান।
ওই নির্বাচন কমিশনার আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিইসি নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন না। সোমবার বিকালে ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা নিবন্ধনের দাবিতে যেভাবে নির্বাচন সচিবালয়ের ভেতরে রুমে রুমে ঢুকে গেছেন, তাতে বিব্রতবোধ ও অনিরাপদবোধ করছেন তিনি। এ কারণে মঙ্গলবার অল্প সময় অফিস করেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। সোমবারের ঘটনায় মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেছে ইসি। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও।
এমন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে সিইসি। তার এ অবস্থান দেখে অন্য কমিশনাররাও পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তারা পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানান তিনি।