আরিয়ান মিশ্রা ও তাদের গাড়ি, ছবি : সংগৃহীত
আরিয়ান মিশ্রা (১৯) নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র বন্ধুদের সাথে গাড়িতে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। ‘গোরক্ষকেরা’ তাকে গরু পাচারকারী হিসেবে সন্দেহ করে। তাদের ভয়ে গাড়ি নিয়ে পালাতে চাইলেও রক্ষা হয়নি আরিয়ানের। প্রায় ৩০ কিলোমিটার তাড়া করে গুলি করে তাকে হত্যা করেছে ‘গোরক্ষকেরা’।
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পালওয়াল জেলায় গত ২৩ আগস্ট রোমহর্ষক এই ঘটনা ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দেশটির পুলিশ এসব তথ্য জানায়। পুলিশ বলেছে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তারা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের আদালতে তোলা হয়েছে।
আরিয়ান দেশটির ফরিদাবাদের একটি উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। পালওয়াল জেলার বাঘোলা গ্রামে ২৩ আগস্ট দিনগত রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ওই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, মূল অভিযুক্ত অনিল কৌশিক (৩৮) ‘লাইভ ফর নেশন’ নামে একটি সংগঠন চালান। তারা গরু রক্ষায় নানা পরামর্শ দেয়।
আরিয়ান হত্যায় জড়িত অন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা হলেন, বরুণ, সৌরভ, কৃষ্ণ ও আদেশ। তাঁদের সবার বয়সই ২০–এর কোটায়। এই পাঁচজনের সবাই ফরিদাবাদের বাসিন্দা।
আরিয়ানের বাবা সিয়া নন্দ মিশ্রা থানায় অভিযোগ করে বলেছেন, তার ছেলে নিজের দুই বন্ধু হর্ষিত গুলাটি ও সাগর গুলাটির সঙ্গে গাড়িতে ঘুরতে বেরিয়েছিল। গাড়িতে হর্ষিত ও সাগরের মা সুজাতা গুলাটি এবং এক প্রতিবেশী কীর্তি শর্মা ছিলেন। তারা যে গাড়িতে বেড়াতে বের হয়েছিল, সেটা একটি রেনো ডাস্টার, মালিক হর্ষিত। আরিয়ানের পরিবার হর্ষিতদের বাড়িতে ভাড়া থাকে।
যে গাড়িতে করে আরিয়ানদের তাড়া করা হয়, সেটি ছিল একটি মারুতি সুইফট। সেটি ফরিদাবাদ সেক্টর ২১ থেকে বাঘোলা পর্যন্ত আরিয়ানদের গাড়িকে তাড়া করে ও গুলি ছোড়ে।
পুলিশের এসিপি (অপরাধ) আমান যাদব বলেন, ‘গাড়িতে থাকা সাগর গুলাটির বিরুদ্ধে সম্প্রতি হত্যাচেষ্টার অন্য একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে ওই মামলার কোনো সম্পর্ক নেই।’
আমান যাদব বলেন, ‘পেছন থেকে অন্য একটি গাড়ি তাদের ধরার চেষ্টা করছে-এমনটা বুঝতে পেরে তারা ভেবেছিল, সেটি তাদের প্রতিপক্ষ দল। তাই তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।’
পেছনের গাড়ি থেকে গুলি ছুড়েছিলেন কৌশিক, তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলেছে, ঘটনার সময় প্রথমে আরিয়ানের মাথার পেছনে গুলি লাগে, তাদের গাড়ি থেমে যায়। পেছনের গাড়ির লোকজন এগিয়ে এসে আবার গুলি করে। এবার গুলি আরিয়ানের হাতে লাগে। গুলি করার পর হামলাকারীরা বুঝতে পারে, তারা এতক্ষণ ভুল গাড়ি তাড়া করেছে। এই গাড়িতে একটি পরিবার রয়েছে, সেখানে গরু পাচারকারী কেউ নেই।
পরদিন ২৪ আগস্ট আরিয়ানের বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং মুঠোফোনের তথ্য ঘেঁটে পুলিশ আরিয়ান হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন পাঁচজনকে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় গত ২৮ আগস্ট চারজন এবং ৩০ আগস্ট একজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ মামলাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখতে পায়, হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে গত ২২ আগস্ট সারান থানায় কৌশিক গরু পাচার নিয়ে এটি অভিযোগ দায়ের (এফআইআর) করেছিলেন।
এফআইআরে কৌশিক অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘গত ২২ আগস্ট ভোররাতে কিছু লোক পিয়ালি চকের কাছে পিকআপে গরু বোঝাই করছে বলে তিনি খবর পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাননি। তার বিশ্বাস, গরু পাচারকারীরা পালিয়ে গেছে। গরুগুলো জবাই করার জন্যই নেওয়া হয়েছে।’
লেখাপড়ার পাশাপাশি আরিয়ান ভারোত্তোলন খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি ভারোত্তোলনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদকও জিতেছেন।
আরিয়ানের মা উমা ছেলের পাওয়া মেডেল ও ট্রফি দেখিয়ে বলেন, ‘সেই প্রথম পরিবারের জন্য সম্মান বয়ে এনেছিল।’ সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস