সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহিল আমান আযমী, ছবি : সংগৃহীত
ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদরদপ্তরে বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বদলা চাইলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ৷
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, কোরআনে আছে খুনের বদলে খুন৷ আমি তদন্ত করে বিচারের আহ্বান জানাই৷ বিগত সরকারের আমলে যারা তদন্ত করেছে তারা যদি দায়সারা ভাবে করে...।
তিনি বলেন, দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে৷ নতুন সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজাবে বলে আমি বিশ্বাস করি৷
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, যত জুলুম, অন্যায়, অবিচার হয়েছে, যত গুম-খুন, অর্থপাচার হয়েছে সবকিছুর আপনারা তদন্ত করবেন৷ এদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন৷ দেশকে সুন্দর সঠিক পথ দেখিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনার নির্বাচনের জন্য এই সরকারকে চাপ দেবেন না, সময় বেঁধে দেবেন না৷ উনারা যথাযথভাবে কাজ করে যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করবেন৷
তিনি বলেন, দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে৷ নতুন সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজাবে বলে আমি বিশ্বাস করি৷
আযমী বলেন, ‘যখন আমার বাসায় তারা আসল তখন তাদের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনারা কারা, পরিচয় কী, পরিচয়পত্র দেখান। তারা আমার কথার জবাব দেননি। আমি বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি তারা কোনো কথার জবাব দেননি। এক অফিসার আমাকে তুই করে সম্বোধন করে। আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে আমাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে নিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। সে সময় আমাকে ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে খুবই খারাপ ব্যবহার করে।’
তিনি বলনে, ‘আমি ফিরে এসে জানতে পারলাম আমার পরিবারের ওপর তারা কী পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে। আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে চেয়েছিল তারা। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে তুলে নিতে চাইলে স্ত্রী আমার মাকে সঙ্গে নিতে বলে তখন তারা তাকে নেয়নি। এ সময় আমার বাড়ির যুবতী কাজের মেয়ের ওপর হাত চালিয়েছে। বাসার ম্যানেজার ও দারোয়ানসহ সবাইয়ের ওপর তারা হামলা চালায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় একটা জায়গায় নিয়ে গেল। তারা আমাকে পোশাক দিল। রাতে আমাকে খাবার দেয় কিন্তু খাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। টয়লেট যেতে চাইলে তারা আমার চোখ-হাত বেঁধে নিয়ে যেত। প্রায় ৫০ কদম হাঁটার পর টয়লেটে যেতাম।’
সাবেক ব্রিগেডিয়ার বলেন, ‘বারবার মনে হতো তারা হয়ত আমাকে ক্রস ফায়ার করে হত্যা করবে। আমি রাতে তাহাজ্জত পড়ে আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম আল্লাহ আমার লাশটা যেন কুকুরদের খাদ্যে পরিণত না হয়। আমার লাশটা যেন আমার পরিবারের কাছে যায়। সব সময় এ দোয়াটাই করতাম।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মেজো ছেলে সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী গত ৬ আগস্ট মুক্ত পান আয়নাঘর থেকে।