ঢাকা মেডেকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপতালে চিকিৎসকদের মারধর ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শাটডাউন ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চিকিৎসকরা এ ঘোষণা দেন।
চিকিৎসকদের দুটি দাবি হলো
২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার করতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ দুটি দাবিই মানতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান ঢামেকের চিকিৎসকরা। কর্মসূচি নিয়ে দুপুর ২টার পর ব্রিফ করা হবে বলে জানান তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শনিবার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাতে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত বিইউবিটির শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। চিকিৎসকদের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে এসে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসককে মারধর করেন; ভাঙচুর চালান। এতে আহত হন তিন চিকিৎসক।
এ ছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এক গ্রুপের ওপর আরেক গ্রুপের হামলায় একজন মারা যান। এ ঘটনায় চাপাতিসহ চারজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
অপর দিকে রাতে বিষপান করে হাসপাতালে এক রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনার পর রাতে হাসপাতালে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায়ীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন তারা। তবে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই হাসপাতালটির চিকিৎসকরা রোববার সকাল থেকে অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন। বন্ধ রয়েছে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগসহ সব ওয়ার্ডের চিকিৎসা সেবা। এরপর দুপুরে দেশের সব হাসপতাল শাটডাউনের ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের ওপর হামলার খবরে ফেসবুক লাইভে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, কিছুক্ষণ আগে ঢামেক হাসপাতালে অপ্রত্যাশিত ঘটনা হয়েছে। রোগী মারা যাওয়ায় সংক্ষুব্ধ একটি পক্ষ এই হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে বলেন, চিকিৎসকদের তাদের মতো করে কাজ করতে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন।
হাসনাত বলেন, একটি বিষয়ে আমি আপনাদের স্পষ্ট করতে চাই, আমাদের গণঅভ্যুত্থান যে মূল স্পিরিট ছিল, আমাদের গণঅভ্যুত্থানের যে জায়গাটি ছিল, সেই জায়গাটি ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। একটি সিস্টেম ডেভেলপ করবে এবং এই সিস্টেমের মধ্য থেকে আমাদের সমাজ, আমাদের রাষ্ট্র, তথা আমাদের দেশ পরিচালিত হবে। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ধরনের কাজগুলো করা হচ্ছে, আজকে ডাক্তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হলো।
তিনি আরও বলেন, আপনি যদি ফোর্স করেন যে আমার রোগীকে বাঁচিয়ে দিতে হবে, এখনই বাঁচিয়ে দিতে হবে, বাঁচিয়ে দিতেই হবে—এটা তো প্রফেশনালিজমের মধ্যে পড়ে না।