কথা বলছেন খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সাতটি ইসলামি দল। তার মধ্যে অন্যতম হলো দুইবারের বেশি যেন কেউ প্রধানমন্ত্রী না হয়।
শনিবার (৩১ আগস্ট) যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আমরা বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। নির্বাচন ব্যবস্থার আমুল সংস্কার আনার দাবি জানিয়েছি। সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। ইসলামবিরোধী কোনো আইন যেন না হয়। দুইবারের বেশি যেন কেউ প্রধানমন্ত্রী না হয়।’
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘কালবিলম্ব না করে সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি জানিয়েছি, প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।’
হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মামলা এক মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করার দাবিও জানানো হয়েছে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী দিনে সহযোগিতার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে আমরা সাড়া দিয়েছি। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অযথা কালবিলম্ব না করে যেন নির্বাবাচন দেয়া হয়, তার দাবি জানিয়েছি। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি।’
সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে লিখিত আকারে যে দাবিগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে
১. প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা
ক. নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার: জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগকারীদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। সে জন্য আসনভিত্তিক বিজয়ী সংসদ সদস্যদের বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।
খ. নির্বাচনবিধি সংক্রান্ত সংস্কার: প্রার্থীদের নিজস্ব প্রচারণার পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করা। যোগ্য, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
২. সাংবিধানিক সংস্কার
ক. বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া একচ্ছত্র ক্ষমতা স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয়। তাই এ ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।
খ. দুই মেয়াদের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা বন্ধ করা।
গ. প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের বিধান করা।
ঘ. সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা।
৩. বিচারব্যবস্থা
ক. বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা। বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখার স্বার্থে বিচারপতি নিয়োগ ও বিয়োগের জন্য জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা।
৪. শিক্ষাব্যবস্থা
শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা সংযোজন করা।
৫. পুলিশ ও প্রশাসন
পুলিশ ও প্রশাসনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের ব্যবহারের পথ বন্ধ করা।
৬. ধর্মীয় আইন
পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন না করা।
এর আগে শনিবার বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক শুরু হয়। অংশ নেন খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলামী, জমিয়তে উলামে ইসলামী, খেলাফত আন্দোলন এবং নেজামী ইসলামের নেতারা। রাত ৮টা পর্যন্ত কয়েকটি দল ও জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলাদাভাবে কথা বলার সূচি রয়েছে।