বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ এবং দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটিসহ ২১ দফা দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন দুই ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা।
শনিবার (৩১ আগস্ট) ভোর ৫টা থেকে এপেক্স ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের শ্রমিকরা হরিণহাটি এলাকায় কর্মবিরতি দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। একই সময়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের শ্রমিকরাও বোর্ডঘর এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেন।
শ্রমিকরা জানান, অন্যান্য শিল্প কারখানায় বেতন বৃদ্ধি হলেও ওষুধ কারখানায় তা না হওয়ায় তাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, ন্যায্য দাবি তুললেই কোম্পানির কর্মকর্তারা চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন। এর প্রতিবাদে তারা মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে না ফেরার ঘোষণা দেন।
মহাসড়ক অবরোধের ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার যানবাহন, আন্তঃজেলা পরিবহন ও পণ্যবাহী যান আটকা পড়ে। এতে পথচারী ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
শ্রমিকরা সকাল ৭টার দিকে মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সড়িয়ে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলেও কারখানা সামনে বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে- অফিস চলাকালীন সময়ে এবং অফিসে যাতায়াতকালীন সময়ে যদি কোনো কর্মী দুর্ঘটনার শিকার হয় তাহলে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা খরচ কোম্পানি বহন করবে। সঙ্গে ওই কর্মীকে কোম্পানির এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারখানার এইচআরডি এজিএম সুরজিৎ মুখার্জি এবং প্রোডাকশন সিনিয়র ম্যানেজার দিপালক কর্মকার, সিনিয়র ম্যানেজার জাহিদুর রহমান, এইচ আর ডি সাম্মি আক্তার ও রুহুল আমিনকে পদত্যাগ করতে হবে। ছুটির জন্য হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। নন ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের সঙ্গে সর্বদা সহনশীল সদাচরণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কোনো কর্মীকে পরবর্তী সময়ে কোনো প্রকার হয়রানি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে না। কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক এবং অপমানজনক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করা যাবে না। এছাড়াও কর্মীদের সঙ্গে সিকিউরিটি গার্ডদের উত্তম আচরণ করতে হবে। প্রতি দুই বছর পর পর সব পারমানেন্ট কর্মীদের গ্রেড উন্নয়ন করতে হবে। মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে। সঙ্গে ছুটিকালীন সময়ে সম্পূর্ণ বেতন এবং ভাতা প্রদান করাসহ ২১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, কারখানার শ্রমিকরা ২১ দফা দাবি জানিয়ে সকাল থেকে বিক্ষোভ করেছেন। শ্রমিকরা দুই-আড়াই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তবে সকাল ১০টার পর থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম মোর্শেদ খান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ মাঠে কাজ করছে। প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তাদের প্রচেষ্টায় এবং শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সাড়ে চার ঘণ্টা পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকদের দাবি আদায়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শ্রমিকদের দাবি পূরণে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।