প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৪, ১:২৯ এএম | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে পতিত শেখ হাসিনা সব সময় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন। ড. ইউনূসকে নিয়ে পায়ই রক্তচোষা, সুদখোর এবং একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য লালায়িত এমন শব্দের ব্যবহার করতেন। এমনকি ইউনূসকে টুস করে পদ্মা সেতু থেকে পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়ার কথাও বলেছেন। ড. মুহম্মদ ইউনূসকে কয়েকদিন আগেও আদালতের এজলাসে লোহার খাচায় দাঁড়াতে বাধ্য করেছিলেন। যে ইউনূসকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন সে ড. মুহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে আগামী রোববার থেকে তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) অফিস শুরু করবেন। আর যিনি ইউনূসকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন তিনি পালিয়ে ভারতে গেছেন। এখন থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’কে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। =
জানা গেছে, তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তরের সম্পর্ক তৈরি করতে এবার বিশেষ সহকারীর পদ বাড়ানো হতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূণ কয়েকটি পদে পরিবর্তন আসতে পারে। এর পরে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গতি বাড়ানোর জন্যই এসব নতুন মুখ আনা হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদের মতো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাচিবিক অনুবিভাগ, ব্যক্তিগত অনুবিভাগ, প্রেস অনুবিভাগসহ বিভিন্ন উইংয়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এমনকি কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও পরিচালক পদেও পরিবর্তনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত এবং প্রেস সচিব ও প্রেস উইংয়ে আরও দুজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উপ-প্রেস সচিব পদে অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদে শাব্বির আহমদ নিয়োগ পেয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবু সাঈদকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব দপ্তর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাগণের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সামলাবেন। পুনর্বণ্টনের পর তিনি মন্ত্রপরিষদ বিভাগ. প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়. খাদ্য মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে তার অধীনে এই ছয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছিল। উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। নতুন করে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সামলাবেন। উপদেষ্টা হাসান আরিফ আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্ৰণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। নতুন করে তাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ে দায়িত্বে ছিলেন। এখন থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ও সামলাবেন। উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নতুন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবন দ্রুতই সংস্কারের কাজ দ্রুতগতিতে করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম। সচিব বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট শপথ নেয়ার প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংস্কার করার নিদেশনা দেয়া হয়েছে।এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করে কাজ করা জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) অফিসের কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন আশা করছি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কমিটি গঠন করে প্রথমে মূল্যায়ন করা হবে। এরপর দ্রুততার সঙ্গে এগুলো পুর্ননির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর পরে আমরা গণবভনের সংস্কার কাজ এবং জাতীয় সংসদের কাজ শুরু করবো।
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশে ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ মানুষ ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে। এর ফলে এই দুই জায়গায় আপাতত অফিস করা বা বসবাস করার মতো পরিবেশ নেই। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন হিসেবে উপযুক্ত করে অফিস চালিয়ে আসছে। যমুনা ভবনটি রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন প্রস্তুত করার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’কে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন হিসেবে কাজ করছেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।