শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংস্কারের হাওয়ায় বহুল আলোচিত নতুন শিক্ষাক্রম গুটিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার কথা বললেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
রোববার (১৮ আগস্ট) সচিবালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি করা এ শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব। কিন্তু এমনভাবে যাব যেন কোনো শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় কোনো অস্বস্তি না হয়। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কীভাবে আমরা আগে শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব সেটা পর্যালোচনা হচ্ছে।’
২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি সামনে রেখে তথ্য-প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার প্রসারে ২০১২ সালে শিক্ষাক্রম তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সেসময় সৃজনশীল পদ্ধতি, পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
এরপর পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়।
ওই বছর দেশের সব প্রাথমিক স্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয় নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর চলতি বছর তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম এবং নবম শ্রেণি যুক্ত হবে নতুন শিক্ষাক্রমের তালিকায়।
নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তন আনা হয়। চাপ কমাতে বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়নের আগে শিক্ষাবর্ষজুড়ে চলে শিখনকালীন মূল্যায়ন। বেশকিছু বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হয় শতভাগ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শেখার মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ প্রক্রিয়াকে আনন্দময় করেছে।
তবে পরীক্ষা কমানো, বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া, মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার হাতে থাকলেও এখন সেই দায়িত্ব পেয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হওয়া নতুন সদস্য অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শিক্ষার পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও রয়েছে তার হাতে।
শুক্রবার শপথ নেওয়ার পর রোববারই প্রথম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আর প্রথম দিনই তিনি শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের আভাস দিলেন।