গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতের ক্ষতগুলো সামনে আসতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭টি ব্যাংকসহ মোট ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং নীতি ও প্রবিধি বিভাগ কাজ শুরু করেছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে সকল দাপ্তরিক কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নব-নিযুক্ত গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংক রক্ষায় পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই চিঠিতে ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এস এম রেজাউল করিমের স্বাক্ষর রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল লুটপাটের কিছু চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন এই লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং ব্যাংকটির প্রতি গণমানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আরও বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা, গ্রাহকের আস্থা ফেরানো এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত, ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তি অথবা সাবেক পরিচালকদের মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে বোর্ড পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে দুইটি বিকল্প নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ কিংবা পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ২০১৭ সালের আগে যারা পরিচালনা পর্ষদে যোগ ছিলেন তাদের কারও কারও ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে এক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে। তাই সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা যেসব ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হতে পারে সেগুলো হলো- ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
এর বাইরে যে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভাঙা হতে পারে সেগুলো হলো- আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল (ইউসিবি) ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও তিনটি ব্যাংক।