ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ উপত্যকাটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ।
বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১০ মাসে গাজায় নিহত মানুষের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৫ জন। একই সময় আহত হয়েছেন আরও প্রায় এক লাখ মানুষ।
ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় হতাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ৬০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ধ্বংস হয়েছে। বিভিন্ন স্যাটেলাইটে ধরা পড়া আলোকচিত্র বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
গত কয়েক মাসের আলোকচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার দক্ষিণ দিকের শহর রাফা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিহত মানুষের পরিসংখ্যানে সাধারণ মানুষ ও যোদ্ধাদের সংখ্যা আলাদা করা হয়নি। তবে নিহত মানুষের একটা বড় অংশই শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়টির প্রতিবেদনে।
চলতি মাসের ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বিবিসিকে জানিয়েছিল, যুদ্ধে তাঁরা ১৫ হাজারেরে বেশি ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা ইসরায়েল হতাহতের যে সংখ্যার কথা জানিয়েছে, তা বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত যাচাই করতে পারেনি।
তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহত মানুষের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে, সেটাকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
যেসব ব্যক্তির মৃত্যু হাসপাতালে নিবন্ধন করা হয়, গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেবল তাঁদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এসব নিহত মানুষের নাম, পরিচয়, বয়সসহ অন্য পরিচয় নথিভুক্ত করা হয়। আর যেসব মরদেহ শনাক্ত করা জানা যায় না, সেগুলোকেও নিহত মানুষের মোট সংখ্যায় যুক্ত করা হয়।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহত মানুষের যে চিত্র প্রকাশ করে, সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলছে ইসরায়েল। গত মে মাসে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজার হতাহত মানুষের সংখ্যাকে ‘ভুয়া’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ গাজায় নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাঁরা এই দাবি করে থাকেন। তাঁদের অনুমান, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় বিধ্বস্ত বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপে এখনো প্রায় ১০ হাজার মরদেহ চাপা পড়ে আছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একটা সময় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলেও রোগ ও অনাহারের মতো যুদ্ধের ‘অপ্রত্যক্ষ’ কারণে গাজায় আরও অনেক মানুষ মারা যেতে পারেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, যুদ্ধ শেষ হলে গাজার হতাহতের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। কারণ, তখন জাতিসংঘ, নানা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, ফিলিস্তিনের নিজস্ব সংস্থা, এমনকি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও আলাদা আলাদা তদন্ত পরিচালনা করবে।
গাজার ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নানা স্যাটেলাইট আলোকচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছেন নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ কোরি শের ও ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ জ্যামন ভ্যান ডেন হোয়েক। তাঁরা গাজার বিভিন্ন স্থানের ভবনের অবকাঠামোর উচ্চতার হঠাৎ পরিবর্তনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন।
আলোকচিত্র বিশ্লেষণের দেখা গেছে, গত মার্চ থেকে গাজার দক্ষিণের শহর রাফায় সবচেয়ে বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে ৬ মের পর। মিসরের সীমান্তবর্তী এই অঞ্চল দখলে নেওয়াটা যুদ্ধে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বারবার দাবি করে এসেছিল ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছিল, হামাসের সর্বশেষ ব্যাটালিয়নগুলো এই অঞ্চলেই রয়েছে। তাদের শেষ করতে হবে।
স্যাটেলাইটের কিছু আলোকচিত্র বিবিসিও বিশ্লেষণ করে দেখেছে। এতে দেখা গেছে, রাফার কোনো কোনো অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মিসরের সীমান্তবর্তী অংশ ও গাজার উত্তর ও দক্ষিণের কিছু বসতিতে এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ বেশি।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। বন্দী করে গাজায় আনা হয় প্রায় আড়াই শ জনকে। এ ঘটনার পরপরই গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এখনো হামলা সমানতালে অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত রয়েছে যুদ্ধবিরতির আলোচনাও।