ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ছে। আরও চারজন যুক্ত হচ্ছে এ পরিষদে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) শপথ নেবেন উপদেষ্টারা।
তাদের একজন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। এর আগে তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা মর্যাদা) হিসেবে নিয়োগ পান। অন্য তিনজন হলেন- অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বঙ্গভবনের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার নতুন উপদেষ্টারা শপথ নেবেন। বঙ্গভবনে বিকেল ৪টায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টাদের শপথ পড়াবেন।
আলী ইমাম মজুমদারের পরিচয়
আলী ইমাম মজুমদার ১৯৫০ সালে কুমিল্লার নানুয়া দিঘিরপাড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ও ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
আলী ইমাম মজুমদার ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন।
চাকরি জীবনে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ উপজেলা ও জেলায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি মন্ত্রিপরিষদসচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বও পালন করেন।
২০১৬ সালে তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও ২০২০ সাল থেকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পরিচয়
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ। তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ার জন্য ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ১৯৭৯ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ২০০৭-২০০৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ছিলেন।
ফাওজুল কবির ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সরকারি চাকরি থেকে লিয়েনে ১৯৯২-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ইডকলের (IDCOL)-এর প্রতিষ্ঠাতা সিইও (CEO) হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সোলার হোম সিস্টেম (SHS) সফলভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন।
২০০৯ সালে ফাওজুল কবির সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরদিন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপনা করেন।
ফাওজুল কবির খান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক Keystone Consulting Company-এর প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, ইউএনডিপি, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের একজন শীর্ষ পরামর্শক। তার বাড়ি সন্দ্বীপের হরিশপুর গ্রামে। তার বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক প্রফেসর।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর জন্ম ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে। তিনি বাংলাদেশের একজন সেনা কর্মকর্তা। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ৩ তারকা হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। জাহাঙ্গীর আলম ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের সাথে সংঘর্ষের সময় এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বঙ্গ সেনা জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষের সময় বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) প্রধান ছিলেন।