বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: দশ লাখ পোশাকশ্রমিক পাবেন টিসিবির পণ্য   স্ত্রী হত্যা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন   মার্কিন দূতাবাসে গেলেন খালেদা জিয়া   চাঁদাবাজির মামলায় অব্যাহতি পেলেন তারেক রহমান   অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না আইনজীবী সাইফুল   আইনজীবী সাইফুলের জানাজায় লাখো জনতা   আইপিএল নিলাম শেষে মুস্তাফিজদের নিয়ে চেন্নাইয়ের বার্তা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নীরবতা ভেঙে মুখ খুললেন মাশরাফি, স্বীকার করলেন ব্যর্থতা
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪, ১২:০০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে যে কয়েকজন পরিচিত মুখ রয়েছে এবং যাদের কথায় তরুণ প্রজন্ম দারুণভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা অন্যতম। অথচ তরুণ প্রজন্মের যৌক্তিক আন্দোলনে (কোটা সংস্কার আন্দোলন) সেই মাশরাফিই ছিলেন পুরোপুরি নিশ্চুপ। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়কের এমন অবস্থানে একেবারেই হতাশ হয়েছেন তরুণরা। সেই সঙ্গে ক্ষুব্ধও হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংসদ সদস্য হওয়ার কারণেই হয়তো দলের বাইরে গিয়ে কিছু বলতে পারেননি সাবেক এই ক্রিকেটার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। পদত্যাগ করে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দলপ্রধানের দেশত্যাগের পর গা ঢাকা দিয়েছেন বাকি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা। অনেকে দেশও ছেড়েছেন।

শেখ হাসিনার পতনের দিন আওয়ামী লীগের অনেক এমপি ও মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। অনেকের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন হামলাকারীরা। বাদ যায়নি মাশরাফির বাড়িও। নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফির বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।

আওয়ামী লীগ গঠিত সরকারের পতনের এক সপ্তাহের বেশি সময় গেলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি মাশরাফি। ৯ দিন পর অবশেষে একটি বেসরকারি অনলাইন পোর্টালের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, অন্যান্যদের মতো দেশ ছেড়ে যাননি মাশরাফি। ঢাকাতেই আছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে কথা বলতে না পেরে হতাশার কথা জানিয়েছেন মাশরাফি। নানা দিক ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত আর এ বিষয়ে কথা বলা হয়ে ওঠেনি সাবেক এই পেসারের।

মাশরাফি জানিয়েছেন, তাকে যদি কিছু করতে হতো, তাহলে দল (আওয়ামী লীগ) থেকে পদত্যাগ করতে হতো। এমনটি নিজের মতামত তুলে ধরার পরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছিলেন তিনি।

মাশরাফি বলেন, ‘দলের বাইরে গিয়ে কিছু করতে হলে আমাকে পদত্যাগ করতে হতো। সেটা যদি করতাম, তাহলে এখন নিশ্চয়ই আমার অনেক প্রশংসা হতো। কিন্তু প্রতিটি সময়ের বাস্তবতা আলাদা থাকে। ওই সময় যদি পদত্যাগ করতাম, তাহলে আরও বড় কিছু হয় কি না, বা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কি না, এরকম অনেক কিছু ভাবতে হয়েছে। আমি যদি সেই ভাবনাগুলি সব তুলে ধরি, সেটারও পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকবে। কিন্তু সম্ভাব্য পরিণতি বা অনেক দিক ভাবতে হয়েছে আমাকে।’

‘নড়াইলের মানুষের কাছেও আমার দায়বদ্ধতার ব্যাপার ছিল। নড়াইল-২ আসনের মানুষের অনেক আশা আমাকে ঘিরে। তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, নড়াইলকে একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। সেই মানুষগুলোর কাছে কি জবাব দেব? এরকম নানা কিছু ভাবতে হয়েছে।’

বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘অনেকেই আমাকে তখন বলেছেন, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিলেও দেশের মানুষ খুশি হবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমার দায়িত্বটা আরও বেশি। আমি যদি ছাত্রদের কাছে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো এটা সমাধান করা বা কিছু করার সুযোগ থাকত। ছাত্ররা যদি আমার আহবানে সাড়া না দিত বা আমাকে গুরুত্ব না দিত, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু নিজের কাছে অন্তত পরিষ্কার থাকতে পারতাম যে, কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছি। সেটা চেষ্টা করেও পারিনি। আগেই বলেছি, ব্যর্থ হয়েছি এবং দায় নিচ্ছি।’

মায়ের জন্য নড়াইলে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন মাশরাফি। মূলত, সেই বাড়িটিই পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃত্তরা। মাশরাফি মনে করছেন, দূর থেকে কেই এসে এই কাজ করেনি। নড়াইলের মানুষই তার বাড়িটি পুড়িয়েছে। তবে যারা তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেবেন না বলে জানিয়েছেন মাশরাফি।

মাশরাফি বলেন, ‘নড়াইলের বাড়িটা করেছিলাম মায়ের জন্য। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারও কাছেই বিচাই চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে অবশ্যই, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারও প্রতি। আমার প্রতি এখনও কারও ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

অগ্নিসংযোগের আগে সেই বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন মাশরাফির মা-বাবা। তবে নিরাপদে সরে যেতে পেরেছেন তারা। বাড়িটিতে মাশরাফির ক্রিকেটীয় জীবনের সব স্মারক ছিল। সেগুলোও পুড়ে গেছে।

এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমি তো এমন বড় ক্রিকেটার নই বা এমন নয় যে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। তবে যা কিছু পেয়েছি, প্রায় সব ওখানেই ছিল। ঢাকায় কিছু নেই। সব পুড়ে শেষ। এমন নয় যে, স্মারকগুলির প্রতি আমার টান অনেক বেশি ছিল। তবে মাঝেমধ্যে দেখতে ভালো লাগতো। অনেক লোকে বাড়িতে যেতো এসব দেখতে। সবার জন্যই তো দুয়ার খোলা ছিল। কিছুই আর নেই। তবে দিনশেষে সান্ত্বনা যে, বাবা-মা অন্তত প্রাণে বেঁচে গেছেন। যা গেছে, কথা বলে লাভ নেই।’



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]