ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট ফজলুর রহমান তার সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৪ এর তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে পৃথক তিনটি সমাবেশ করেছেন। গত ১০ আগস্ট ইটনা কলেজ মাঠে, ১১ আগস্ট মিঠামইন নতুন কাঠবাজার মাঠে এবং ১২ আগস্ট অষ্টগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতার ব্যাপক উপস্থিতিতে তিনটি সমাবেশের প্রত্যেকটিতেই ছিল দ্বিতীয় বিজয়ের উচ্ছ্বাস। হয়ে উঠেছিল পরাধীনতার শিকল ভাঙার পর মুক্ত জীবনের উদযাপনস্থল। সেসব সমাবেশ থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের পরিবারকে দিয়েছেন ক্ষমার বার্তা।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের মিঠামইনের কামালপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ জনতা। কিন্তু ফজলুর রহমানের নির্দেশে তারা নিবৃত্ত হন। এডভোকেট ফজলুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আবদুল হামিদের চক্রান্তের কারণে আমার জীবনের ২৮টি বছর হারিয়ে গেছে। আমাকে আমেরিকায় নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আমি আমার সন্তানদের মুখ দেখতে পারিনি।
আমার স্ত্রীর মুখ দেখতে পারিনি। আমার এলাকাবাসীর মুখ দেখতে পারিনি। তার দ্বারা আমি যে জেল, জুলুম-অত্যাচারে জর্জরিত হয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এখন আমি নির্দেশ দিলে, আবদুল হামিদের বাড়ির একটা ইটও থাকবে না। কিন্তু আমি তা করবো না। আমি আবদুল হামিদকে ক্ষমা করে দিলাম। হাওরের অলওয়েদার সড়কের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে ফজলুর রহমান বলেন, এই রাস্তার কারণে মানুষের কপাল নষ্ট হচ্ছে। রাস্তার পূর্বদিকে তিন উপজেলার আড়াই লাখ একর জমি আছে, এসব জমিতে ১৫ বছর পর ধুলা পড়ে খাগড়া গাছ হবে। যাদের জমিতে খাগড়া ক্ষেত হবে, তাদের জমির ক্ষতিপূরণ আমি চাই। এই ক্ষতিপূরণ চাওয়ার জন্যে আমি ৩০ কিলোমিটার লম্বা মানববন্ধন করবো।
এদিকে সমাবেশগুলোতে ফজলুর রহমান ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন নেতা তাদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সাবেক প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্যদের অপকর্ম তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। মিঠামইনের সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আমার বাবা-ভাইয়ের কবরসহ তিন একর ১৪ শতাংশ জায়গা অবৈধভাবে মাত্র তেইশ শ’ টাকা শতাংশ মূল্য ধরে অধিগ্রহণ করে নেয়া হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের ছোট ভাই অধ্যক্ষ আবদুল হক নূরু ‘মিঠামইনের জিন স্যার’ এবং ভাতিজা মিঠামইন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফ কামাল ‘মিঠামইনের ফাটাকেষ্ট’ হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করে জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, এদের অত্যাচারে মানুষের মুখ খোলার কোনো সুযোগ নেই। জলমহাল, হাওর-বাঁওড়সহ সমস্ত কিছু শরীফ কামালের নিয়ন্ত্রণে। নদীতে মাটি তুলবে তাকে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
হিন্দুরা সাবেক প্রেসিডেন্টের পরিবার দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে অনন্ত দাস নামে এক যুবককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, তার নাম অনন্ত দাস। তার জমি ছিল, কিন্তু সেটি হাতছাড়া হয়ে গেছে। ‘জিন স্যার’ নিয়ে গেছেন। জমি দখল, পুকুর দখল, বিল দখল সবকিছু তারা করেছে। হিন্দু জেলেরা জাল নিয়ে যেতে পারতো না, তাদের জাল ধরে নিয়ে যেতো। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করবো।