বর্তমান তরুণ সমাজ, অর্থাৎ জেন–জির (জেনারেশন জেড বা জুমারস, যাদের বয়স ১১ থেকে ২৬, অর্থাৎ ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাদের জন্ম) তাদের পোশাকেও রয়েছে পরিবর্তন। সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাক যে টি শার্ট তা নিয়ে সন্দেহ নেই। যদিও সব বয়সের মানুষের ওয়ার্ডরোবে এখন টি-শার্ট থাকবেই।
মূলত গরমের অস্বস্তি এড়াতেই টি-শার্টের জন্ম উনিশ শতকে। কারখানা শ্রমিকেরা কারখানার গরম থেকে বাঁচতে নিজেদের জাম্পস্যুটের হাতা কেটে ছোট করে নিতেন। আস্তে আস্তে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে জনপ্রিয় হতে থাকে এই পোশাক। সর্বস্তরের মানুষের কাছে টি-শার্টকে জনপ্রিয় করে তোলেন অভিনেতা মার্লোন ব্র্যান্ডো। পঞ্চাশের দশকে এ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার সিনেমায় অধিকাংশ দৃশ্যেই তাঁকে টি-শার্ট গায়ে দেখা যায়। পরবর্তী দুই দশকে গণমানুষের পোশাক হয়ে ওঠে টি-শার্ট।
দেশে একুশ শতকে এই টি-শার্ট অনেক জনপ্রিয় হয়। তখন বাজারে অনেক টি-শার্ট পাওয়া যেত। তবে অধিকাংশ আসলে গার্মেন্টসের বাতিল পণ্য। সুলভ মূল্যের সেসব টি-শার্টে মিলত বিদেশি নকশা।
বাংলার নিজস্ব টি শার্ট
বাংলাদেশি মানুষের জন্য বাংলার নিজস্ব নকশার টি-শার্ট চিন্তা থেকেই যাত্রা শুরু হয় দ্রুতই। এখন সব মানুষই এটিকে ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে বাছাই করেছেন। পরতে আরাম, সব আবহাওয়ায় মানানসই, সব মিলিয়ে টি-শার্টের জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। তবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কাছে টি-শার্টের সংজ্ঞা বদলে গেছে অনেকখানি। টি-শার্ট এখন আর ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে নয়, বরং বার্তাবাহক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। চলতি ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিলছে অভিনব সব ডিজাইন ও স্টাইল।
ধরনে এসেছে বদল
গত কয়েক বছরে টি-শার্টের ধরনেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। আঁটসাঁট টি-শার্টের পরিবর্তে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন ড্রপ শোল্ডার টি-শার্ট। ট্রেন্ডের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিনিয়তই নিজেদের আপডেট করছেন বেশ কিছু উদ্যোক্তা তা মাথায় রেখেই কাজ করছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশনের সঙ্গে দেশীয় কিছুর মিশ্রণ করে ট্রেন্ড তৈরি করছেন। টি-শার্টে চোখ বোলালেই বোঝা যায়—কার কী পছন্দ-অপছন্দ, কোন দিকে হাঁটছে ট্রেন্ড। নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে টি-শার্ট তৈরি করেন কিছু উদ্যোক্তা।
যেমন হয় কাপড়
তুলা অথবা পলিয়েস্টার দিয়েই তৈরি হয় টি-শার্ট। তবে স্বাচ্ছন্দ্যের দিক থেকে সব সময়ই এগিয়ে আছে তুলা। শতভাগ তুলার তৈরি টি-শার্ট যেকোনো আবহাওয়াতেই মানানসই। তবে জিএসএম (জিএসএম হলো গ্রাম /স্কয়ার মিটার, সহজ করে বললে—এক স্কয়ার মিটার কাপড়ের ওজন যত গ্রাম, সেটাই তার জিএসএম । আর স্কয়ার মিটার হলো এক মিটার দৈর্ঘ্য ও এক মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট কোনো বর্গ)–এর ওপর কাপড়ের গুণমান নির্ভর করে। জিএসএম যত বেশি, টি-শার্টের গুণগত মান তত ভালো। বেশির ভাগ টি-শার্টই ১৬০ থেকে ২০০ জিএসএমে তৈরি হয়।
বংক টি-শার্টসের স্বত্বাধিকারী নাজমুল সাকিব আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের টি-শার্টে নিট অ্যান্ড ডায়িং ফেব্রিক ব্যবহার করে থাকি। এসব টি-শার্ট আগে থেকেই সিলিকন ওয়াশ দেওয়া থাকে। এতে ক্রেতা প্রথমবার পরিষ্কার করলে তা থেকে রং বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ক্যানভাস হয়ে উঠেছে টি-শার্ট
তরুণদের কাছে টি-শার্ট এখন হয়ে উঠেছে একটি ক্যানভাস। সেই ক্যানভাসে নিজের পছন্দসই নকশা তুলতে পারছে তারা। নিত্যনতুন মিম, আর্ট স্টাইলে সীমাবদ্ধ থাকছে না তারা। বরং যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, রসবোধ, প্রতিবাদ, দেশপ্রেম-সবকিছুই ঠাঁই পাচ্ছে টি-শার্টে। কেউ কেউ আবার নিজের পছন্দের ব্র্যান্ড, খেলোয়াড়, টিভি সিরিজ-সিনেমা-কমিক বুকের চরিত্র, চরিত্রগুলোর ডায়ালগ দিয়ে তৈরি করিয়ে নিচ্ছে টি-শার্ট। ভক্তকুলও তা কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।
বেচাকেনা অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় তরুণদের কাছে অপশনও অনেক। এক পেজে পছন্দ না হলেই অন্য পেজে ঢুঁ মারা যাচ্ছে, দাম ও মানে সন্তুষ্ট করতে পারলেই ক্রেতাকে ধরে রাখতে পারছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের মধ্যেও তাই লড়াইটা অনেক বেশি, সুলভ মূল্যে ভালো মানের ও নকশার পণ্য ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার লড়াইটাই তাদের মধ্যে বেশি। তবে তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে কাস্টমাইজড টি-শার্ট। কিছু অনলাইন পেজ তাদের ক্রেতাদের জন্য কাস্টমাইজড টি-শার্ট তৈরি করার অপশনও রেখেছে। ক্রেতারা চাইলেই নিজের পছন্দসই ডিজাইন দিয়ে টি-শার্ট বানিয়ে নিতে পারেন। নিজের পছন্দসই নকশা গায়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোতে যে আনন্দ, তা যেন টি-শার্টও দিতে পারে।