রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দুই তরুণকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) বেলা পৌনে ১১টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দুই তরুণকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতরা হলেন- সাঈদ আরাফাত শরীফ (২০) ও সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন (১৯)।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে গণধোলাইয়ের শিকার দুই যুবককে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়েছিল। পরে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আমরা জানতে পেরেছি ধর্ষণের অভিযোগে এই দুই যুবককে গণধোলাই দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একজনের নাম সাঈদ আরাফাত শরীফ, তার বাবার নাম কবির হোসেন। আরেকজনের নাম সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন। সে কুতুবখালী মাহমুদুল হাসান মাদ্রাসার মেশকাত শরীফের ছাত্র ছিল। বর্তমানে যাত্রাবাড়ী থানার ধনপুরের বউবাজার এলাকায় থাকত। সে ওই এলাকার সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে বলে জানা গেছে। মরদেহ দুটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানিয়েছি।
অচেতন অবস্থায় সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে আসা স্কাউট সদস্য সম্রাট শেখ বলেন, ‘সকালে সায়দাবাদে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে গণধোলাই দেন অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। পরে সায়দাবাদ থেকে কে বা কারা দুজনকে যাত্রাবাড়ী থানায় রেখে যায়। এদের মধ্য থেকে আমি সাঈদ আরাফাত শরীফকে অচেতন অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অন্য আরেকজন সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনকে তার পরিবার ঢামেকে নিয়ে গেলে তাকেও চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।’
সম্রাট শেখ আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি সায়দাবাদ এলাকায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় এক নারী। পরে বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানাই এবং উৎসুক জনতা তিনজনকে পিটিয়ে আহত করে। তাদের মধ্য থেকে দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছিল, আর একজনের খোঁজ জানি না। বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই নারী সেনাবাহিনীর কাছে আছেন। দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে।’
এদিকে নিহত ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার জানান, ইয়াসিন ১৫ দিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি যাত্রাবাড়ী ধলপুর বউবাজারের বাসা থেকে বের হন। এরপর বহুবার ফোনে কথা হয়েছে তাঁর (মায়ের)। আজ ভোর ৪টার দিকেও শিল্পি আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা হয় ইয়াসিনের। তখনও ইয়াসিন সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন বলে মাকে জানান। এরপর সকালে কেউ একজন তাঁর মাকে ফোনকলে জানান, তাঁর ছেলের অবস্থা ভালো না এবং দ্রুত যাত্রাবাড়ী থানায় যেতে বলেন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে তিনি থানায় গিয়ে ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান।
নিহত ইয়াসিনের মায়ের অভিযোগ, থানা থেকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও তাঁর ছেলে কথা বলতে পারছিলেন। বলছিলেন, ওদের (ইয়াসিনসহ অন্য দুজন) মিথ্যা অভিযোগে মারধর করা হয়েছে। তাঁরা কোনো অপরাধ করেননি। এরপর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যান ইয়াসিন।