শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির হ্যাটট্রি, তিলকের বিশ্ব রেকর্ড   ফার্মগেটে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট   মর্যাদাপূর্ণ সমাজ রূপান্তরে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ   পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ৬ আসনেই এগিয়ে তৃণমূল   ইউক্রেনে বিমান প্রতিরক্ষা উন্নয়ন বাড়ানো হচ্ছে: জেলেনস্কি   অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৫ জন   আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
তারেক ও মিশুকের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ৮:০৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার হিসেবে সমাদৃত তারেক মাসুদ। তিনি ছিলেন সিনেমার ফেরিওয়ালা। সিনেমা দিয়ে মানুষের মধ্যে আলো ছড়ানোর দায়িত্ব পালন করেছেন আমৃত্যু। তার হাত ধরে এ দেশের সিনেমা দেশে-বিদেশে পেয়েছে সম্মান-মর্যাদা। 

আর ক্যামেরা ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করে যেসব বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আশফাক মিশুক মুনীর ছিলেন অন্যতম। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আশফাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিও গ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।

এ ছাড়া তিনি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন এটিএন নিউজের নির্বাহী পরিচালক ছিলাম। সবার কাছে মিশুক মুনীর নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। তারেক মাসুদের সিনেমা ‘রানওয়ে’র প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) অকাল প্রয়াত এ দুই বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রগ্রাহকের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। এক যুগের অধিক সময় হলো তাদের প্রস্থানের৷

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মাসে কাগজের ফুল লোকেশন দেখতে গিয়ে ফিরে আসার সময় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান তারা। তাদের সঙ্গে আরও নিহত হন তারেক মাসুদের ড্রাইভার, প্রোডাকশন ম্যানেজার ও এক কর্মী।

তারেক মাসুদ ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাদ্রাসায় তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি সাধারণ শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি ও মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আশির দশকের মধ্যভাগে শুরু হওয়া স্বাধীনধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের অগ্রগণ্য পরিচালক তিনি। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রায় সাত বছর তিনি শিল্পীর সান্নিধ্যে কাটান এবং সেই সময়েই তার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি ও দর্শনচর্চায় তারেক মাসুদ নিজেকে যুক্ত করেন।

মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজনির্ভর প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গান এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রকার হিসেবে তারেক মাসুদ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্পকালীন প্রবাসজীবনে তিনি আবিষ্কার করেন মার্কিন পরিচালক লিয়ার লেভিনের ধারণকৃত ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ফুটেজ যা তার জীবনের ধারা বদলে দেয়। লিয়ার লেভিনের ফুটেজ ও পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ফুটেজ মিলে তিনি ও আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ মিলে নির্মাণ করেন মুক্তির গান যা জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইড-এর পরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত। মুক্তির গান ‘ফিল্ম সাউথ এশিয়া’ থেকে বিশেষ সম্মাননা অর্জন করে। মুক্তির গান সারা দেশে বিকল্প পরিবেশনায় প্রদর্শিত হয় এবং বহুল জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্রটি দেখে সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, তার ভিত্তিতে ভিডিও চলচ্চিত্র মুক্তির কথা নির্মিত হয়। মুক্তির কথা প্রাধান্যশীল মধ্যবিত্তের বয়ানের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের একটি ভিন্ন ভাষ্য নির্মাণ করে।

অন্যদিকে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সংবাদ পরিবেশন কুশলীদের অগ্রনায়ক আশফাক মুনীর ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তিনি এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে একটি শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনি কানাডায় যান এবং নিউ ব্রান্সউইক ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে কাজ করেন। ছাত্র অবস্থাতেই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অডিও ভিজ্যুয়াল বিভাগে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে মিশুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ইলেকট্রনিক সাংবাদিকতায় পাঠদান ও প্রশিক্ষণ দান করতেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং যন্ত্রপাতি আনার জন্য আমেরিকায় যান। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মিশুক বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন একুশে টিভিতে সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং একুশে টিভিকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন অগ্রনায়ক হিসেবে কাজ করেন। এখানে তিনি বিবিসি-এর প্রবীণ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং-এর সাহচর্য লাভ করেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে মিশুক কানাডায় গমন করেন। সেখানে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মিলে অনেকটা স্ব-উদ্যোগেই ইন্টারনেট মাধ্যমকে ব্যবহার করে ‘দি রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্ক’ নামে একটি সংবাদ পরিবেশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেন। কানাডাতে তিনি ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফিও করতেন।

‘এটিএন নিউজ’ নামে একটি টিভি নিউজ চ্যানেল গড়ে তোলার উদ্দেশে ২০১০-এর শেষের মিশুক আবার দেশে আসেন। তার নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে কিছুদিনের মধ্যেই এটিএন নিউজ জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল হিসেবে পরিচিতি পায়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সদাহাস্য মিশুক ছিলেন এমন একজন মানুষ যার ছিল কঠোর নিষ্ঠা ও ন্যায় পরায়ণতা, প্রগাঢ় সমাজ-চেতনা এবং সাধারণ মানুষের জন্য গভীর ভালোবাসা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]