প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।
শনিবার (৩ আগস্ট) আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
এর আগে সকালে গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক থেকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণভবনের দরজা খোলা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।
এর প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে। যখন সময় ছিল তখন সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে, নির্যাতন করেছে। আখতার হোসেন, আরিফ সোহেলসহ রাজবন্দীদের কারাগারে রেখে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতায় যাবো না।
তিনি বলেন, আমরা যখন ডিবি অফিসে ছিলাম, তখন আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমাদের অনশন ও রাজপথে আন্দোলনের কারণে সে পরিকল্পনা সফল হয়নি।
আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা যখন ডিবি অফিসে বন্দি ছিলাম, তখনই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আন্দোলন স্থগিত করতে বলা হয়। এমনকি জোর করে গণভবনে নিয়া যাওয়ার পরিকল্পনাও চলছিল। এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে আমরা অনশনে বসেছিলাম। আপোষহীনতার মূল্য যদি মৃত্যুও হয় তাও পরিশোধ করতে প্রস্তুত আছি। ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ আহ্বান করছি।
এদিকে, ৯ দফা দাবিতে আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিকেল ৩ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করছেন।
অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে ট্যাক্স ও খাজনাসহ সরকারি সকল বিল প্রদান থেকে বিরত থাকা, কলকারখানা বন্ধ রাখা, রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রাখা, গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ দেশের নাগরিকদের প্রতি ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা কোনো সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও প্রাণনাশ চাই না৷ নিরাপত্তা বাহিনীকেও এরজন্য সহযোগিতা করতে হবে। আওয়ামী ‘সন্ত্রাসীদের’ রাজপথে দেখা গেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এর দায়ভার নিতে হবে।
তিনি বলেন, রক্ত ঝরলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমরা ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের দমন-পীড়ন, প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্র করে এ আন্দোলন থামানো যাবে না। ছাত্রজনতা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল। সরকার দমন-পীড়ন করে সেটিকে সংঘাত ও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারফিউ দিয়ে ও ইন্টারনেট বন্ধ করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এবার এরকম পরিস্থিতি হলে কারও জন্যই পরিণতি ভালো হবে না।
দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শ্রমিক, অভিভাবকসহ জনগণকে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ।
তিনি আরও বলেন, অসহযোগ আন্দোলনে সকল গার্মেন্টস ও শিল্প কলকারখানা বন্ধ থাকবে। গার্মেন্টস শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর- সকল শ্রমিকদের আহ্বান করছি আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য। ছাত্র-বন্ধুরা শ্রমিকদের সঙ্গে করে নিয়ে আসুন মিছিলে। জরুরি অবস্থা বা কারফিউ ছাত্র-নাগরিক মেনে নেবে না। শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি চাইলে গুলি ও হামলা করার নির্দেশ বন্ধ করতে হবে। অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে।
নাহিদ আরও বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান থাকবে খুনি সরকারকে সমর্থন না দিয়ে ছাত্র-নাগরিকের পাশে থাকুন। সরকার জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ালে সেই সরকারের হুকুম শুনতে আপনারা আর বাধ্য নন। ছাত্রদের সাথে মিছিলে যোগ দিন। আমরা পুলিশ নয়, হুকুমের আসামিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাই। নিরাপত্তা বাহিনীকে মিছিলে যোগদানের আহ্বান থাকবে।