ফের আলোচনায় জামায়াত। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে জুমার নামাজের পর কি ধরনের কর্মসূচি নিবে এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। জামায়াত এখন কোন পথে হাঁটতে পারে সে বিষয়ে রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেও রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া, জিজ্ঞাসা।
এর আগে ২৯ জুলাই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪-দলীয় জোটের সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে জামায়াতকে নিষিদ্ধের কথা বলা হয়। এরপর পহেলা আগস্ট নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপরই শুরু হয়েছে আলোচনা-পর্যালোচনা।
আজ জুমার নামাজের পর সাধারণ মুসল্লিদের ভিড়কে পুঁজি করে কোনো অরাজকতা ও ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ড জামায়াতের নেতাকর্মীরা করবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়ে বিভিন্ন জনের মনে।
এদিকে, জামায়াত আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে চাইবে না বলে মনে করছেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক। তাদের মতে, জামায়াতে ইসলামী যদি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়, তাহলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, তা গত এক দশকে দেখা গেছে। দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মূলত আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই দলটি পরিচালিত হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে মোটাদাগে ব্যর্থ জামায়াত সুযোগ খুঁজে মাঠে নেমেছে। সহিংস কর্মকাণ্ডেও জড়াতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ মুহূর্তে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে সরকার বড় ধরনের ঝুঁকি কাছে ডেকে এনেছে। এমনিতেই কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আন্দোলনের চাপে আওয়ামী লীগ সরকার। এ অবস্থায় যদি জামায়াত বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে, বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর। তবে অনেকেই আবার বলছেন, জামায়াত সরকারের ফাদে পড়বে না, বড় ধরনের কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে কোটা আন্দোলনের দায় মাথায় নিবে না দলটি।
তারা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব রক্ষার্থে জামায়াত তাদের হালচাল পরিবর্তন করে নতুনভাবে মাঠে নামার চেষ্টা করতে পারে অথবা আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা ইসলামপন্থি সমমনা রাজনৈতিক দলে লীন হয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চাইতে পারে কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে না পারলেও জামায়াত নিজেদের মতো করে সংগঠিত হয়েছে, বিকল্প পথ তৈরি করে রেখেছে। যেমন জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বা কর্মীদের কেউ কেউ ইতিপূর্বে কিছু দলে যোগ দিয়েছে। নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা হয়তো অন্য দলে ব্যাপকভাবে যোগ দেবে। ভিন্ন নামেও সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে পারে এবং নতুন করে পুরনো খোলসে রাজনীতির মাঠে থাকার চেষ্টা করতে পারে। এ সম্ভাবনাটাই বেশি বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
সমাজ ও অপরাধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘জামায়াত সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের কারণে নিষিদ্ধের কবলে পড়েছিল। খুব সরলভাবে বললে, কাউকে নিষিদ্ধ করলে বা তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করলে, তারা বিকল্প পথ বেছে নেয়। মনে রাখতে হবে, জামায়াত তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে অবস্থানটা আরও পোক্ত করতে চায়। তাই বলে নিষিদ্ধ করলেই তারা যে ডার্ক উইন্ডোর (সহিংসতা) দিকে চলে যাবে, এটা বলা যায় না। তারা খুব অগতান্ত্রিক আচরণ করবে সেটাও বলা যায় না। তবে তারা রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’