প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪, ১:৩৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ
গৃহবধু মিলুফা ফেরদৌসি মিলি(৩৬)। তার পৈত্তিক নিবাস রংপুর জেলার আলমনগরে। স্বামী তৈফিক খাঁন (৩৭)। পেশায় মেরিন প্রকৌশলী। বাড়ি ঢাকার কদমতলীর দক্ষিন দনিয়ায়। ম্যারেজ মিডিয়া সাইডে তাদের প্রথম পরিচয়। পরে উভয়ের পরিবারের অজান্তে প্রেম-প্রনয় ঘটে তাদের। তাই দাম্পত্ত জীবন সুখে কাটাতে নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে দূরের শহর মোংলায় সংসার পেতে ছিলেন এ দম্পত্তি। বিয়ে ও সংসার জীবনের মাত্র চার মাসের মাথায় লাশ হয়ে কফিনে বাবার বাড়ি ফিরে গেলেন গৃহবধু মিলুফা ফেরদৌসি মিলি। তাকে শারিরীক নির্যাতন ও শ্বাস রোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ।
হত্যাকান্ডের এ ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৯ জুলাই সোমবার দিনগত মধ্যরাতে মোংলার শিকারীর মোড় সংলগ্ন হাজ্বী বাহার উদ্দিন সড়কে। এই এলাকায় জনৈক তৈয়েবুর রহমান কচির ভাড়া বাড়ীতে বসবাস করতেন তৈফিক-মিলি দম্পত্তি। ঘটনার পর মঙ্গলবার ৩০ জুলাই সকালে নিহতের স্বামী প্রকৌশলী তৈফিক খাঁন নিজেই থানায় পৌছে স্ত্রীর আত্মহত্যার খবর দেন পুলিশকে। ঘটনাস্থলে পৌছে মিলির মরদেহ উদ্ধার ও প্রাথমিক সুরাতহালে পুলিশের সন্দেহ হলে আটক হন স্বামী তৈফিক।
এ ঘটনার খবর পেয়ে নিহত মিলির বাবা ফেরদৌস আলম মুকুল সহ নিকট আত্মীয় স্বজন মোংলায় পৌছান মঙ্গলবার রাতে। পুলিশের প্রাথমিক ধারনা হত্যাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্ত্রীর আত্মহত্যার প্রচারনা চালায় স্বামী তৈফিক। এ ঘটনায় নিহত নারীর চাচাতো ভাই ইফতিয়ার হাসান লিমন বাদী হয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে মোংলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, তার বোন মিলি অন্যত্র বিবাহ ও সংসার করতেন। ম্যারেজ মিডিয়া সাইডে পরিচয়ের পর তৈফিক তাকে নানা প্রলোভন ও ফুসলিয়ে গত ৩০ মার্চ খুলনায় নিয়ে যায়। এদিন আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করেন তারা। পরে মোংলা বন্দর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু তৈফিক তার আগের স্ত্রী ও সন্তান থাকার বিষয়টি গোপন এবং পরবর্তী জানাজানি হলে উভয়ের মধ্যে মনমালিন্য শুরু হয়। এভাবে তাদের সংসার জীবন পার হয় টানা চার মাস। মৃত্যুর আগের দিন ২৯ জুলাই বিকালে মিলি রংপুরে তার মাকে ফোন করে স্বামীর মারধর ও শারিরীক নির্যাতনের কথা জানায়। এমনি তাকে তাকে হত্যার হুমকি রয়েছে বলে মাকে অবহীত করেছিলেন মিলি। এমন শংকার মধ্যে দিন গড়িয়ে রাত পোহালে পরিবারে তার মৃত্যুর খবর পৌছায়।
গতকাল বুধবার বাগেরহাট জেলা মর্গে তার ময়না তদন্ত সম্পন্ন হলে বিকালে লাশের কফিন নিয়ে রংপুরের আলম নগরের পিরপুর গ্রামে রওয়ানা হয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। আর স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া তৈফিক খাঁনকে বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে মোংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার জানান, নিহতের দু' হাত বাহু সহ শরিরের বিভিন্নস্থানে ছোট বড় কাটা ছেড়ার ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া তার স্বামীর শরিরেও রয়েছে কামড়ের ক্ষত। তাই এ গৃহবধু হত্যাকান্ডে তার স্বামী জড়িত থাকার প্রাথমিক ধারনা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে এটি হত্যাকান্ড বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।