বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: আগামী নির্বাচনের সময় জানালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত   ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে   ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে ৬ মামলা বাতিল   নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, নাসির উদ্দীন সিইসি   ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন ক্রিকেটার মঈন আলী   বিক্ষোভরত অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া   জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কোটা বিরোধী আন্দোলনে কি বিএনপি-জামায়াত মদদ দিচ্ছে?
হাফিজ শরিফ উদ্দীন
প্রকাশ: বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪, ৪:৪৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে ছাত্র সমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলে দেশে অস্থিরতার সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। বিদেশ থেকেও এই আন্দোলনকে মদদ জোগানো হচ্ছে। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা এখন ছাত্রদের উসকে দিয়ে চাইছে দেশকে ফের অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে। তাই মেধা ভিত্তিক নিয়োগের দাবি তুললেও তারা আসলে আওয়ামী লীগ সরকারকে উতখাত করতে চাইছে। তারা জানে, বিএনপি ও জামায়াত জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই অরাজনৈতিক মুখোশে ঢাকতে চাইছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়।  ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর পিছনে রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের গোপন অভিসন্ধি। 

ছয় বছর পর আবার বাংলাদেশ কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেরবার। আন্দোলনকারীরা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিএনপি নেতাদের কথাতেই সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনকে সর্বতোভাবে মদদ জোগাচ্ছেন ড. শাহদীন মালিক ও আসিফ নজরুল। তারাই শিক্ষার্থীদেরকে আইনি দিকগুলো বলে দিচ্ছেন। এরা দুজনই  বিএনপি এবং জামায়াতের ঘণীষ্ট। জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা আন্দোলনের উগ্রতা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকি সকলেই বহিরাগত। বিএনপি ও জামায়াতই ছাত্রদের আন্দোলনে দলীয় কর্মীদের ভীড় বাড়াচ্ছে।
তবে বিএনপি কৌশলগত কারণে আন্দোলনের থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। পিছন থেকে মদদ দিলেও তারা বোঝাতে চাইছে, ছাত্র আন্দোলনে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। কিন্তু অর্থ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে আন্দোলনকে সমানে মদদ দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। এমনকী, বিদেশ থেকেও আসছে নিয়মিত পরামর্শ। সামাজিক গণমাধ্যমেও চলছে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে নানাধরনের প্রচার। 

বিএনপি নেতারা জানেন, তাদের বিন্দুমাত্র জনসমর্থন নেই। তারা সামনে থাকলে কোটা বিরোধী আন্দোলনও ব্যর্থ হবে। কারণ ছাত্রমহলেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা এখন তলানিতে ঠেকেছে। তবু এই আন্দোলন থেকে ফায়দা তুলতে মরিয়া বিএনপির নেতারা। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে পিছন থেকে তাই মদদ জোগাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল তাদের। তাই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের যে মূল সমস্যা, সেটা ডাইভার্ট করার জন্য এ ধরনের আন্দোলনকে তৈরি করা হচ্ছে।’ প্রথমে দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে তাকেই বলতে শোনা গেছে, ‘ছেলেদের যে দাবি, সেটা আমরা সমর্থন করি। এটাকে অযৌক্তিক বলার কোনো কারণ নেই।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও একধাপ এগিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকেই দায়ী করেছেন। বিএনপি নেতারা মুখে সাধু সাজলেও আন্দোলনকে সহিংস করতেও সচেষ্ট বলে অভিযোগ।

কোটা বিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার যথেষ্ট যত্নশীল। মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যথেষ্ট মানবিক। তাই এখনই কড়া হাতে আন্দোলন দমন করতে চাইছে না সরকার। যথেষ্ট ধৈর্য সহকারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন।  দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সব কর্মসূচি বন্ধ করে আদালতের নির্দেশনা মেনে অবিলম্বে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।  

তিনি বলেন, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলনকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। তাদের সে খায়েশ পূরণ হতে দিবে না আওয়ামী লীগ’। একই সঙ্গে তিনি আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে কোনো মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে’।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় স্থায়ী সমাধানের কথা বলে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনায় কোনও খামতি নেই। আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।’ আপাত দৃষ্টিতে এই দাবির মধ্যে অযৌক্তিক কিছু নেই। সরকারও অনেক বিষয়েই সহমত। কিন্তু ছাত্রদের আবেগকে কাজে লাগাতে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির যে ষরযন্ত্র চলছে তা বরদাস্ত করা কোনও সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। 
মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা সরকারই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করে। ফলে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত বাতিল হয় সব ধরনের কোটা। কিন্তু কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ২০২১ সালে আদালতে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ফলে ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের উপর ৪ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয় আপিল বিভাগ। স্থগিত হয় কোটা পুনর্বহালের রায়। অর্থাৎ কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসা এখন কোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করছে। সরকারের দায় নেই। এটা বুঝেও আন্দোলনকে উসকে যাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।

মাথায় রাখতে হবে, শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চাকরি ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বা কোটার কথা বলা আছে। জাতপাতের ভিত্তিতে ভারত শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেও সংরক্ষণ প্রথা চালু রেখেছে। পাকিস্তানের কোটা ব্যবস্থায় নারী, জাতিগত সংখ্যালঘু ও স্বল্পোন্নত অঞ্চলের ব্যক্তিদের জন্য সরকারি চাকরিতে পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে। কানাডায় বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি চাকরিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ কোটা। যুক্তরাষ্ট্রেও সংখ্যালঘু ও নারীদের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগ দিতে রয়েছে বিশেষ বন্দোবস্ত। কমিউনিস্ট শাসিত চীনের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ হচ্ছে বিভিন্ন জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কোটা অত্যন্ত জরুরি। 

বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থার মানবিক দৃষ্টিতেই পরিবর্তন আনতে চাইছে আওয়ামী লীগ সরকার। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিয়ে কোনও নেতিবাচক মনোভাব নেই সরকারের। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রতিও রাষ্ট্রের কর্তব্য রয়েছে। সর্বোপরী আইনি দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হয় সরকারকে। এখন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি বহিরাগতের দিয়ে গোটা দেশে অশান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস কিছুতেই বরদাস্ত করা যায় না। বিরোধীদের ষরযন্ত্র রুখে দিয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলন প্রত্যাহার করে অবিলম্বে সমাধানসূত্র বার করাই সকলের জরুরি কর্তব্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]