জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কারের পক্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে তারা। এর আগে সোমবার দিবাগত রাতভর জাবি ক্যাম্পাসে ছিল উত্তেজনা। সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলকারীদের সাথে। এ সময় প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক আহত হওয়ার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
দেখা গেছে, কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
বেলা ১টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা ডেইরি গেটে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। আধঘণ্টা পর মহাসড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে পরে শিক্ষার্থীরা। এর পর শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকে অবস্থান নেয়। অনেক শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতে থাকে।
দুপুর দুইটার দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, বিপিএটিসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাভার সরকারি কলেজ, মীর্জা গোলাম হাফিজ কলেজ, ধামরাই সরকারি কলেজ ও হার্ডিঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। এর পর তারা ক্যাম্পাসে মিছিল করে বিকেল তিনটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, কোনো বহিরাগত যাতে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকতে না পারে এ জন্য তারা বিভিন্ন ফটকে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সদস্যসচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা গত রাতের মতো হামলা চালাবে। সে জন্য আমরা ক্যাম্পাসের সকল গেটে অবস্থান নেই। কোনোভাবেই তাদের আর ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হবে না। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী আমাদের আন্দোলন চলবে।’
তিনি আরও জানান, এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ১০-১৫ জন আহত আন্দোলনকারী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতুর অবস্থা গুরুতর। তিনি নিজেও হামলায় আহত হয়েছেন বলে জানান।
এরআগে সোমবার দিবাগত রাতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষের জের ধরে সারারাত ধরেই দু'পক্ষের মধ্যে চলেছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
সোমবার দিবাগত রাত প্রায় আটটার দিকে কোটা সংস্কার পক্ষের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালালে তারপর থেকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক সময় কোটা সংস্কারের পক্ষের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
প্রায় সারারাতই ক্যাম্পাস থাকে উত্তাল। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের প্রায় বিশ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা দেয়া হয়। অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মধ্যরাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ এসে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে সে সময় একজন শিক্ষক আহত হওয়ার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষের সময় উপাচার্যের বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
জাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল আহসান, তিনি বলেন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চারদিক থেকে অস্ত্রশস্ত্রসহ সন্ত্রাসীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে শুনে উদ্ধার করার জন্য কয়েকজন শিক্ষক ভিসি ভবনে গিয়েছিলাম। সেখানে আলোচনা চলাকালে ভিসি ভবনের মূল ফটক ভেঙে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়,”এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভিসির স্টোর রুমে তারা ১০-১২ জন শিক্ষক আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পরে হামলাকারীরা সেই রুম ভেঙ্গে গালাগালি ও মারধর শুরু করে।
এক পর্যায়ে পুলিশ ভবনের সামনে এসে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ কর্মীরা সরে যায়। পরে রাত দুটার দিকে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিলসহ আবারো উপাচার্যের বাসভবনের দিকে আসতে শুরু করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গেও আন্দোলনকারীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্যের প্রতিবাদে এবং কোটা সংস্কারসহ কয়েকটি দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়।