দূর্ণীতির দায়ে অভিযুক্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখার উচ্চমান সহকারী আবু তাহেরকে বদলি
অবশেষে দূর্নীতি, অনিয়ম ও অবৈধ পদোন্নতি নিয়ে চাকরি করা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখার উচ্চমান সহকারী আবু তাহেরকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
রবিবার (৭ জুলাই) তার দপ্তর থেকে সরিয়ে গুরুত্বহীন কমন সার্ভিস শাখায় বদলি করা হয়। একই সাথে তার বিরুদ্ধে ওঠা দূর্নীতি, অনিয়ম, অবৈধ পদোন্নতি ও চাকরিতে চরম স্বেচ্ছাচারিতার কর্মকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ বন্দরের পরিচালক প্রশাসনের।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ নুরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিতে বন্দরের উপ- ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কর্ম) মোঃ সালাহ উদ্দিন কবিরকে তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে।
আবু তাহেরের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে কীনা জানতে চাইলে, তদন্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন কবির উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন এ বিষয়ে আপনাদের কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি, বলেই ফোন কেটে দেন।
তবে বন্দরের দু' জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবু তাহেরের দূর্নীতি ও অনিয়মের খবর একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন কবির কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হয়েছেন এবং অভিযুক্ত আবু তাহেরের সাথে তার বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। এতে তাহেরর বিষয়ে উথ্যাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বলেও জানান তারা।
এর আগে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে বিধি বর্হিভূত পদোন্নতি নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠার পর নড়েচড়ে বসে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমানের কাছে এসব অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।
সেই অভিযোগ সুত্রে গেছে, মোঃ আবু তাহের চাকরির প্রথম অবস্থায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগে যোগদান করেন। এ বিভাগে চাকরি কালীন সময়ে তিনি লোহার পাইপ চুরি সংক্রান্ত ঘটনায় জড়িত থাকায় দোষী সাবস্ত হয়ে ২০১৬ সালের ১১ আগষ্ট বিভাগীয় শাস্তিপ্রাপ্ত হন। পরবর্তিতে তিনি তথ্য গোপন রেখে উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিরাপত্তা থেকে জুনিয়র আউটডোর পদে রহস্যজনকভাবে পদোন্নতি নেন। এরপর আবু তাহের ২০২২ সালের দিকে প্রভাব বিস্তার করে কৌশলে কতিপয় সিবিএ ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জুনিয়র আউটডোর পদ থেকে উচ্চমান সহকারী পদে পুনরায় পদোন্নতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখায় যোগদান করেন।
এদিকে আবু তাহেরের এ পদোন্নতিকে ঘিরে নানা অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারী চাকরি বিধির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ওপর বিভাগীয় কোন দন্ড আরোপ করা হলে তিনি তার দন্ড ভোগের মেয়াদ শেষে লঘু দন্ডের ক্ষেত্রে এক বছর ও গুরু দন্ডের ক্ষেত্রে দুই বছর পদোন্নতির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এ ক্ষেত্রে আবু তাহেরের দন্ড ভোগের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ১১ আগষ্ট থেকে ২০১৯ সালের ১০ আগষ্ট। রহস্যের বিষয় হচ্ছে দন্ড ভোগের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবু তাহেরকে নিরাপত্তা প্রহরী হতে জুনিয়র আউটডোর পদে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারী পদোন্নতি দেয়া হয়। যে পদোন্নতি নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন ও রহস্য দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে অভিযুক্ত মোঃ আবু তাহের কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখায় উচ্চমান সহকারী হিসেবে যোগদান করেই উর্ধতন কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতাদের দোহাই দিয়ে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, তিনি দাপ্তরিক অনুমতি ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর, বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান ও বসবাসের ঘর বাবদ নিয়মিত মাসিক মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে থাকেন। বন্দর ভবনের পূর্ব পাশের রেল লাইন সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা এর আগে উচ্ছেদ করা হলেও তিনি সম্পত্তি শাখার লোক পরিচয় দিয়ে পুনরায় সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরীর সুযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বন্দরের সাইফ পোর্ট এর বিপরীত স্থানে কর্তৃপক্ষের আম বাগান থেকে চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমান আমসহ কাঠান ও ডাব তিনি কালো বাজারে অহরহ বিক্রী করে অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। বন্দরের বিদ্যুতের লাইন সংলগ্ন গাছের ছোট ডালপালা কাটার নামে তিনি তার লোকদের দিয়ে বড় বড় ডাল কাটিয়ে অন্যত্র বিক্রী করে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বন্দরের সাতটি ডাইক থেকে লোক দিয়ে বিপুল পরিমান বালু তিনি নিলেও কর্তৃপক্ষের তহবিলে জমা দিয়েছে সামান্য পরিমান বালুর টাকা। এ বালু বাণিজ্য করে তিনি লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এ ছাড়া আবু তাহের বন্দর ভবনের আশপাশ, ফরেষ্ট অফিস সংলগ্ন, পাওয়ার হাউজ এলাকা, পিকনিক কর্ণারসহ বিভিন্ন এলাকায় জায়গা, স্থাপনা, পুকুর বরাদ্দ দিবে বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করে চলেছে।
ইতিপূর্বে আবু তাহেরের এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জন অভিযোগ দিলেও কোন রহস্যজনক কারণে এসবের কোন প্রতিকার হয়নি বলে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করা বিভিন্ন অভিযোগে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবু তাহেরের বক্তব্য জানার জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব অফিসিয়াল বিষয়, এ কারণে কোন মন্তব্য করবো না।
তবে অবশেষে সেই আবু তাহেরের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই তাকে বদলি করা হলো। একই সাথে তার বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস বন্দরের পরিচালক প্রশাসনের।