নিজে যা চাইবেন তাই হবে। ক্ষমতা বলে কথা। চাকরি শুরুটাই হয়েছে ক্ষমতা দিয়ে তিনি আবার শুনবেন কার কথা। এমনই অভিযোগ উঠেছে হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) সুলতান আহমেদ খানের বিরুদ্ধে। যিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জাল সার্টিফিকেট দাখিল করে পদোন্নতির আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্মরত প্রতিষ্ঠাটিতে। আর এই পদোন্নতি ঠেকানোসহ তার জাল-জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিআইডব্লিউটিয়ের চেয়াম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিআইডব্লিউটিয়ের সহকারী প্রকৌশলী আকারুজ্জামান নামের এক কর্মকর্তা। অপরদিকে সুলতান আহমেদ খানের অকল্পনীয় সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন তার গ্রামবাসী।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান ২০০৩ সাল হতে অদ্যাবধি ড্রেজিং বিভাগেই কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়েছে ৮ জন। কেউ তাকে বদলি করতে পারেনি। তিনি বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং এবং ড্রেজার/জাহাজ ক্রয়ের যতগুলো প্রজেক্ট এসেছে তার বেশকিছু প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বা পিডি হয়েছেন ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিয়ের ড্রেজিং বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর সার্টিফিকেট জমা দিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষে চাকরিতে যোগদান করেন। সম্প্রতি, তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বরাবর বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন।
উল্লেখ্য, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৪ বছর মেয়াদী হয়। তার চাকরির ব্যক্তিগত নথিপত্র পরীক্ষা নীরিক্ষা করলে দেখা যাবে, তিনি চাকরিতে যোগদানের পর হতে ৪ বছরের জন্য কখনও ছুটি নেয়নি। চাকরিতে যোগদানের পর হতে অদ্যবধি প্রতিটি মাসের নিয়মিত বেতন নিয়েছেন। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করতে হলে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। চাকরি হতে ছুটি না নিয়ে, নিয়মিত প্রতি মাসের বেতন গ্রহন করে, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে নিয়মিত ক্লাসও না করে কিভাবে, কখন, কোন প্রতিষ্ঠান হতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করলেন। তার দাখিলকৃত সার্টিফিকেট ভুয়া। জাল জালিয়াতি করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট বানিয়ে জমা দিয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএ হতে শক্তিশালী কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হলে সত্যতা বের হয়ে আসবে। সার্টিফিকেট জালিয়াতি করার জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শান্তি কামনা করেন বিআইডব্লিউটিএ’র সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ এবং ভুয়া, জাল-জালিয়াতি করা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট আমলে তাকে পদোন্নতি না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে গ্রামবাসী কর্তৃক দুনীতি দমন কমিশনে দায়েরকৃত অভিযোগে তার অঢেল সম্পদের হিসাব নিকাশ সম্পর্কে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খানের এসব সম্পদের মধ্যে উঠে এসেছে, তার বর্তমান বাসার ঠিকানা বাড়ি নং-৪৭, ফ্লাট নং- ডব্লিউ-২, রোড নং-৪, সেক্টর-৩, উত্তরা। উত্তরায় ৫৬০০ বর্গফুটের এই ফ্লাটটি ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দিয়ে ২০২০ সালে স্ত্রী মোছা. রাজিয়া সুলতানার নামে ক্রয় করেছেন। পুরোটাই ঘুষের টাকা। গ্রামের ঠিকানা গ্রাম- ভাটিপাড়া, পোস্ট- ভাটিগাড়া, উপজেলা-সুজানগর, জেলা-পাবনা। ২০২১ সালে গ্রামের বাড়ি পাবনার সুজানগরে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ৫ তলা আলিশান বাড়ি নির্মান করেছেন। ঘুষের টাকা দিয়ে বিল্ডিং বানানোর জন্য ‘ভাটিপাড়া গ্রামের’ লোকজন তাকে ঘুষখোর অফিসার বলে ডাকেন। পাবনার সুজানগর থানাধীন রানী নগর মৌজায় সুলতান নিজের নামে ২০০০ সালে ৪.৬ একর কৃষি জমি, ৩.৫ একর ভিটি জমি এবং ৮৮ শতাংশ ডোবা জমি ক্রয় করেন। এছাড়া ২০০২ সালে উক্ত মৌজায় তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার নামে ১.২০ একর কৃষি জমি, ২.২ একর ভিটি জমি এবং ৪৫ শতাংশ ডোবা জমি ক্রয় করেন।
২০০০ সালে সুজানগর ‘বিলগন্ডহস্তি মৌজায়’ নিজের নামে ৫.৩ একর কৃষি জমি, ১.৩৩ একর ভিটি জমি এবং ৩ একর ডোবা জমি ক্রয় করেন। ২০০১ সালে সুজানগর ভাটিকয়া মৌজায় স্ত্রী সহ নিজের নামে ২.২১ একর কৃষি জমি, সুপারির বাগানসহ ২.৬ একর ভিটি জমি ক্রয় করেন। ২০১৬ সালে পাবনা সদরের স্কয়ার রোড শাল গড়িয়া এলাকায় ২ বিঘা জমি ক্রয় করে সেখানে ৫তলা বিশিষ্ট রাজিয়া ভিলা নামে বাড়ি নির্মাণ করেন। এখানে বাড়ী ও জমি বাবদ অন্তত ৬কোটি টাকা ব্যয় করেন। ২০০১ সালে সুজানগর সৈয়দপুর মৌজায় নিজের নামে ৩.১৬ একর কৃষি জমি ও ২০১০ সালে ২.৩১ একর ভিটি জমি এবং ১.৩ একর ডোবা জমি ক্রয় করেন। ২০০২ সালে সুজানগর বিলগন্ডহস্তি মৌজায় নিজের নামে ৩.৮৫ একর কৃষি জমি, এবং পরবর্তীতে আরও ১.৫৬ একর কৃষি জমি ক্রয় করেন। ২০০৬ সালে সুজানগর ভাটিকয়া মৌজায় নিজের নামে ২.৮৮ একর কৃষি জমি, ১.১ একর ভিটি জমি নামে ক্রয় করেন।
২০১১ সালে গাঝীপুরের টঙ্গী থানাধীন কাকিলসাতাইশ মৌজায় নিজের নামে ৪.৪০ একর এবং স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার নামে ১.২৫ একর কৃষি জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে এই জমিগুলো মাটি ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করার প্রক্রিয়াধীন। ২০১৪ সালে ঢাকার তুরাগ এলাকার সাবেক বাউনিয়া মৌজায়, (বর্তমান রাজউক) নিজের নামে ২৫ শতাংশ ভিটি জমি ক্রয় করেন। একই বছরে স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার নামে ৩৫ শতাংশ ভিটি জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে এই জমিতে মাটি ভরাট করে ৪ তলা ফ্ল্যাট বানিয়ে কোটি কোটি টাকা বিক্রি করছেন। বিআইডব্লিউটিএ’র মোংলা হতে ‘চাদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ’ হয়ে পাকশি পর্যন্ত নৌরুটের নাব্যতা উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেকে অনুমোদন করেন। প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পান সরকারের যুগ্ম সচিব বাদল মিয়া। তিনি ১ বছর দায়িত্ব করার পর ২০১৭ সালে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খানের অত্যাচারে পিডি পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ওই বছর কাজ না করে নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান ২০ কোটি টাকার বিল উপস্থাপন করলে পিডি বিল দিতে অসম্মতি জানায়। কিন্তু সুলতানের হাত অনেক বড় লম্বা হওয়া সে উপর মহলের মামুকে ফোন করে পিডিকে প্রমোশন না দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ কোটি টাকার বিল ঠিকাদারকে দিতে বাধ্য করেন। বিল দেয়ার ১ মাস পর পিডি দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান পিডি হওয়ার জন্য ওই মামুকে দিয়ে তদবির শুরু করেন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সে (সুলতান আহমেদ খান) বিআইডব্লিউটিএ’র শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে পিডি বানানো যাবে না বলে বৎসনা করেন। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে যুগ্ম-সচিব মো. দেলোয়ার হোসেনকে ২০১৮ সালে প্রকল্পের পিডি হিসাবে নিয়োগ দেন। কিন্তু পিডি মো. দেলোয়ার হোসেন ও নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান দু’জনে যোগসাজসে ২ বছরে ৩৫০ কোটি টাকার ড্রেজিং বিল দিয়েছেন। ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছে এবং অবশিষ্ট ২৫০ কোটি টাকা তারা ভাগবাটোরা করেছেন।
মোংলা হতে ‘চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ’ হয়ে পাকশি পর্যন্ত নৌ-রুটে ২ বছরে তারা ১৮০ লাখ ঘনমিটার মাটির জন্য ৪৫০ কোটি টাকার বিল দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা যাবে তারা কোথায় এ মাটি কেটেছে এবং কোথায় ফেলেছে তার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন অস্তিত্ব নেই। ২০২০ সালে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় হতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কমিটি সরেজমিনে গিয়ে ড্রেজিং এর মাটি কোথায় ফেলা হয়েছে তার কোন অস্তিত্ব খুজে পায়নি। পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি মনিটরিং করার সময়ও তারা কোথায় এত মাটি ফেলা হয়েছে তার কোন অস্তিত্ব খুজে পায়নি। আইএমইডি’র রিপোর্টে এসব উল্লেখ আছে। ‘মোংলা হতে চাদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশি পর্যন্ত’ নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দেখানো হয়েছে ২২ লাখ ঘনমিটার মাটির বিল দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২ বছরে তারা এখানে ৮ লাখ ঘনমিটার মাটি কেটেছে। নিয়ম অনুযায়ী ২২ লাখ ঘনমিটার মাটি ড্রেজিং করা হলে এ রুট দিয়ে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যেত না।
লঞ্চ মালিক সমিতি হতে বারবার পত্র দেয়া হচ্ছে যে, ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের মিয়ারচর চ্যানেল বন্ধ রয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন যে, মিয়ারচর চ্যানেল বন্ধ থাকায় নৌযানগুলো কালিগঞ্জ চ্যানেল দিয়ে ইলিশা হয়ে আসতে তাদের ৪/৫ ঘন্টা সময় বেশী লাগছে এবং বেশি তৈল খরচ হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও মিয়ারচর চ্যানেল কেটে দেয়া হয়নি। কারণ তারা ইতোপূর্বে এখানে ১৪ লাখ ঘনমিটার মাটির বিল বাবদ ঠিকাদারকে ২৮ কোটি টাকা পরিশোধ করে ভাগবাটোরা করে নিয়েছেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে এসে নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খানের চাপে পড়ে দেলোয়ার হোসেনও পিডি পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সুলতান আহমেদ খান উপর লেভেলের মামুকে দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে এবং মন্ত্রণালয়ে বিভিন্নভাবে প্রকল্পের পিডি হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। ‘মামুর চাপাচাপিতে’ অবশেষে তাকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় হতে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পেয়েই সুলতান আহমেদ খান প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার কোটি হতে বৃদ্ধি করে ২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করেন। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাচাই করে ১২৯০ কোটি টাকার প্রস্তাব করেন। সংশোধিত ডিপিপি ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর তারিখে অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সন্ধ্যা নদী, সুগন্ধা নদী, কালাবদর নদী, আড়িয়াল খা নদ, বলেশ্বর নদী, কচা নদী খনন করার কথা। কিন্তু এ নদীগুলো খনন না করেই বিল দিয়ে যাচ্ছেন অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক সুলতান আহমেদ খান এর বিরুদ্ধে। সুলতান আহমেদ খান বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স এসোসিয়েশনের ক্রিড়া সম্পাদক। সে ক্ষমতা দেখিয়ে মামুকে দিয়ে ফোন করিয়ে কোন পদ না থাকা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে জোড় করে পদোন্নতি নিয়েছেন। এ বিষয়ে অন্যান্য প্রকৌশলীরা প্রতিবাদ জানালেও কোন লাভ হয়নি। তার ভয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান, সদস্য প্রকৌশলসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভীতসন্তস্ত।
উল্লেখ্য যে, টেকনিক্যাল পুলের পদোন্নতির ফাইলে সদস্য প্রকৌশলের স্বাক্ষর নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এক্ষেত্রে তার স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। দপ্তর আদেশ নং-১৬৬০/২০২২, তারিখ: ২১/০৭/২০২২, নথি নং-১৮.১১.০০০০.১৭১.২৬.১০২.১৯ (খন্ড অংশ-০১)/২৩৮৪, তারিখ: ২১/০৭/২০২২ অবৈধ অফিস আদেশে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হয়েছেন। সুলতান আহমেদ খান বিআইডব্লিউটিএ’র বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে পত্র পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে লেখালেখি করে বিআইডব্লিউটিএ’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেন। বিআইডব্লিউটিএ এজন্য তাকে শোকজ করেছিলো। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে তা বাতিল করতে বাধ্য করেন। সুলতান আহমেদ খান একজন আমেরিকার বাসিন্দা। সে আমেরিকায় ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ২০১৯ সালে ৫তলা বাড়ি কিনেছেন। সে নিজস্ব টাকায় সরকারী কোন কাজ ছাড়া প্রায়ই আমেরিকায় যাতায়াত করেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় হতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নথি নং- ১৮.০০.০০০০.০১৯.২৫.০০১.১৭-১৬৫, তারিখ: ০৭.০৩.২০১৯ জিও জারী করিয়ে নেন। সে নিজস্ব টাকায় ০৭.০৩.২০১৯ হতে ২২.০৩.২০১৯ তারিখ পর্যন্ত (যাতায়াত বাদে) ১৬ দিন আমেরিকায় অবস্থান করেন। আমেরিকা যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া সব মিলে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করেন। ২০১৪ সালে বিআইডব্লিউটিএ হতে ৩টি ড্রেজার কর্ণফুলী, কপোতাক্ষ ও কুশিয়ারা সংগ্রহ করা হয় ভোস্তা এলএমজি কোং এর নিকট হতে ২২৫ কোটি টাকা বিল দিয়ে ৩টি ডেজার ও ২টি টাগ বোট সংগ্রহ করেন। বাস্তবে ঐ ড্রেজার ৩টি ও টাগ বোট ২টির বাজার মূল্য ১১০ কোটি টাকা হলেও ৫ কোটি টাকা বেশী খরচ করেন।
ড্রেজার ৩টি ১২ বছর কাজ করার পর নষ্ট হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত ৩টি ড্রেজার কর্ণফুলী, কপোতাক্ষ ও কুশিয়ারা ঠিক হয়নি। অথচ এগুলো মেরামতের নামে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু ড্রেজার ৩টি কোন ড্রেজিং কাজ করতে পারছে না। সুলতান আহমেদ খান ছিলেন ছাত্র শিবিরের সক্রিয় সাথী সদস্য। বর্তমানেও জামায়তের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ-তে সবাই তাকে জামায়ত ইসলামের কর্মী বলেই জানেন। তার বাবা মরহুম আব্দুস সাত্তার খানও ছিলেন জামাতের সক্রিয় কর্মী। বিআইডব্লিউটিএ’র এক আতংকের নাম সুলতান আহমেদ খান। সে বলেন দুদুকে এবং বিভিন্ন অফিসে তার অনেক আত্মীয় স্বজন উচ্চ পর্যায়ে চাকুরী করেন। বিআইডব্লিটিএ’র লোকজন ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেন না। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে। আমরা পাবনার সুজানগর, ভাটিকয়ার বাসিন্দা। ভাটিকয়ার গ্রামের লোকজনের অনেক জায়গা-জমি জোর করে দখল করেছে। দুই বছর আগে সুজানগর থানায় সলিম উদ্দিন ও করিম উদ্দিন দুই ভাইকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রায়ই গ্রামে এসে সাধারন মানষকে ভয়-ভীতি দেখান। তার বাবার তেমন কোন সম্পত্তি ছিল না। সে বিআইডব্লিউটিএ-তে চাকুরী পাওয়ার পর হতে জমি-জমা কেনা শুরু করেন। দুর্নীতির টাকা দিয়ে ঢাকায় আলিসান বাড়ি বানিয়েছেন। আমরা তার বিচার চাই।
সুলতান আহমেদ খান অবৈধ টাকা দিয়ে আমেরিকার নিউইয়র্কে ৫তলা বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া নিজের ও স্ত্রীর নামে ঢাকার উত্তরায় ২টি আলিসান ফ্লাট বাড়ি (৪৩০০ বর্গফুট ও ২৩৫০ বর্গফুট), নিকুঞ্জে ১টি ২২৪০ বর্গফুটের ফ্লাট বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া সুলতান বাউনিয়া এলাকায় ১টি ফ্লাট বাড়ি, ঢাকায় ৪০ শতক ও গাজীপুরে ৪.৪০ একর কৃষি জমি এবং নিজ জেলা পাবনায় বিভিন্ন মৌজায় প্রায় ৩৮ একর কৃষি, ভিটে ও নাল জমি ক্রয় করেছেন। সুলতান আহমদের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার নামে উত্তরায় বাড়ি নং-৪৭, ফ্লাট নং-ডব্লিউ-২, রোড নং-৪, সেক্টর-৩, ফ্লাটটি ৫৬০০ বর্গফুটের ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দিয়ে ২০২০ সালে ক্রয় করেছেন। পাবনায় ৫ তলা রাজিয়া ভিলা এবং ঢাকার উত্তরায় ৩৫২০ বর্গফুটের ফ্লাট বাড়ি, বসুন্ধরায় ২৪১০ বর্গফুটের ফ্লাট বাড়ি, পূর্বাচলে ৫কাঠা ও আবতাব নগরে ৩.৫ কাঠার প্লট কিনেছেন।
রাজিয়া সুলতানার নামে পাবনায় প্রায় ৯ একর কৃষি, দলা, ভিটি জমি ক্রয় করেছেন। সরকারী চাকুরী করে দুর্নীতিবাজ বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তদন্ত করে তার ও তার স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাব নিলেই চরম দুর্নীতির রহস্য উদঘাটন হবে। তদন্ত করে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবীতে অনড় তার গ্রামবাসী। এই বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে জানিয়েছেন, তিনি এখানে কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তার যা মন চায় তিনি তাই করে। তার তো ভাই ‘মামু’ আছেন। তিনি নিজেকে অনেক ক্ষমতাশালী কর্মকর্তা মনে করেন। অনেক তাকে ‘চেয়ারম্যান পদবী’ দিয়ে ডাকেন।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ খান ভোরের পাতাকে বলেন, ভাই আমার কোন ক্ষমতা নেই। একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিচ্ছেন। আমি বিদেশে যাই সরকারি টাকায়। সেটা সরকারি কাজে নিজের কোন ব্যক্তিগত কাজে না। এক প্রশ্নের জবাবে ভোরের পাতাকে তিনি আরো বলেন, বিদেশে আমার কোন সম্পত্তি বা কোন বাড়িঘর নেই এগুলো সব মিথ্যা কথা।