উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি আবারও বাড়ছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার মাত্র ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরআগে একই পয়েন্টে দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই ৩ ঘন্টায় পানি প্রবাহ বেড়েছে ১০সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকলে আবারও বন্যার আশংকা করছেন তিস্তাবাসী।
এরআগে গত রোববার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সোমবার ওই পানি আবারও কমে যায়। পানি বৃদ্ধিতে জেলার ৫ উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও তিস্তা চরাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়ে। পানি নিয়ন্ত্রণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট এখনো খুলে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। চর এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। তবে সোমবার সকাল থেকে পানি কমে যাওয়ায় রাস্তা ঘাট জেগে উঠে, অনেক বাড়ি ঘর থেকে নেমে যায় পানি। তবে কাদাযুক্ত রাস্তা ঘাট ও ঘর বাড়িতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষজন। গরুর প্রধান খাদ্য খড় ভিজে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন গবাদি পশু নিয়ে। এদিকে কমে যাওয়া তিস্তার পানি বৃদ্ধির খবরে আবারও চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েন। তবে সোমবার ওই পানি আবার কমে যাওয়ায় এসব এলাকার বাড়ি ঘর থেকে পানি নামতে শুরু করে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাল থেকে আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বন্যার আশংকা করছেন তিস্তাবাসী।
আদিতমারী উপজেলা মহিষখোঁচা ইউনিয়নের তিস্তা গোবর্ধন চরবাসীরা জানান, শনিবার বিকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যার মধ্যেই তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। আর রাতেই সেই পানি বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাদল বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। তবে দ্রুত গতিতে পানি নেমে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরে আসে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল মানুষদের। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাল থেকে পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশংকা করছেন তিস্তাবাসী।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, শনিবার বিকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় থেকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সোমবার কমে গিয়ে সেই পানি মঙ্গলবার বিকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে।