সম্প্রতি পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে পাঠানো পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের চিঠির প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)।বিষয়টিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি বলে উল্লেখ করে বিজেসি।
শনিবার (২৩ জুন) বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক এবং সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি দেশের সাবেক ও বর্তমান উচ্চ এবং নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের সকল গণমাধ্যমের সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। যা বিজেসি’র নজরে এসেছে।
সকল শ্রেণী-পেশা ও সার্বিক জনস্বার্থে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ যখন ক্রমাগত উন্নত করা জরুরি, তখন কোনো একটি পেশার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে ঢালাওভাবে টার্গেট করে এমন বিবৃতি- সমাজে হুমকির সংস্কৃতি তৈরি করবে বলেও মনে করে বিজেসি।
বিজেসির বিবৃতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ও সমাজের দর্পণ গণমাধ্যমকে যদি এভাবে দেখা বা টার্গেট করা হয় তাহলে দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণু নীতি’র মিশনকে দুর্বল করা হয়। কারণ গণমাধ্যমের কাজ অনিয়ম-দুর্নীতি-বিচ্যুতিকে তুলে ধরা, সকল ক্ষেত্রে ক্ষমতা কিংবা ক্ষমতাবানদের প্রশ্ন করা, জনপরিসরে, জনস্বার্থে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাহিনীর কর্তা ব্যাক্তিরা বলেছেন, ‘ব্যাক্তির দায় কোনদিন প্রতিষ্ঠান নেবে না’। তবে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই চিঠির মাধ্যমে কি ব্যাক্তির দুর্নীতির দায় প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে তুলে নেয়া হয় না? যেসব প্রতিবেদন গণমাধ্যমে হয়েছে তা সত্য না মিথ্যা সে বিষয়ে কোনো ধরনের তদন্ত না করে ঢালাওভাবে এ ধরনের চিঠি দেয়া পেশাদারী দায়িত্বশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে পুলিশের মুক্তিযুদ্ধকালীন আত্মত্যাগ ও দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়াসহ নানা কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের ভালো কাজের মুল্যায়ন সবসময় প্রতিবেদন আকারে সাংবাদিকরা প্রচার করে থাকেন বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। করোনাকালে পুলিশের মানবিক কর্মসূচি গণমাধ্যমের কারনেই দেশবাসী জানতে পেরেছে। ভালো খবরের পাশাপাশি দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধান এবং ক্ষমতার অপব্যবহার উম্মোচন করাও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কাজ।
যেসব সাবেক ও বর্তমান পুলিশ সদস্যর বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে- তা যদি অসত্য হয়, দালিলিক প্রমাণ যদি না থাকে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ি ঐ ব্যাক্তি প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ার কথাও বিবৃতিতে বলা হয়। যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আইনসম্মত পন্থা আছে। তা না করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঢালাওভাবে সব প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপের শামিল।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ওই চিঠির বিষয়ে বিজেসি উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, প্রতিবেদন বন্ধ নয় বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ঘোষিত ‘শূন্য সহিষ্ণু নীতি’ বাস্তবায়নের জন্য বাহিনীর সহযোগিতা আশা করে বিজেসি।
উল্লেখ্য, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ‘অঢেল’ সম্পদ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। আদালতের নির্দেশে বেনজীর, তার স্ত্রী ও মেয়েদের নামে থাকা শত শত বিঘা জমি, একাধিক ফ্ল্যাট জব্দসহ প্রায় তিন ডজন ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। বেনজীরসহ তার স্ত্রী ও মেয়েদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক ডাকলেও হাজির না হয়ে সময় চেয়েছেন তারা। এছাড়াও, পুলিশের আরও কর্মকর্তা ও কনস্টেবলের ‘অস্বাভাবিক সম্পদ’ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। শুক্রবার (২২ জুন) পুলিশ ক্যাডার সার্ভিসের এই সংগঠনটির সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ‘অতিরঞ্জিত’ ও ‘নেতিবাচক’ বলে উল্লেখ করা হয়।
ভোরের পাতা /আরএস