কালো টাকা সাদা করার যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা নৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক দিয়েই অগ্রহণযোগ্য : ভোক্তা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা নৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক দিয়েই অগ্রহণযোগ্য। তাই এ ব্যবস্থা থেকে সরে আসা উচিত বলে মনে করে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ভলান্টারি কনজুমারস ট্রেনিং অ্যাড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা)।
মঙ্গলবার (১১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ভোক্তা। ‘কতটা জনবান্ধব হলো এই বাজেট?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব করতে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতে এবং মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা; বাজার সিন্ডিকেট মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বাজেট প্রস্তাবনা সংযোজন; বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ কমিয়ে আনা; ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতির বিষয়ে; বাজেটে সুস্পষ্ট ঘোষণা সংযোজন এবং স্মার্ট নাগরিক; মূল্যবোধ সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি; শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি; মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবায় বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার; ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা থেকে সরে আসা এবং ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয় সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভোক্তার নির্বাহী পরিচালক খলিলুর রহমান সজল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সমস্যার স্বীকৃতি আছে, কিন্তু সেটির উত্তরণ ঘটিয়ে সুসময়ে ফেরার ব্যবস্থা বা দিক নির্দেশনার অভাব রয়েছে। ভোক্তার পক্ষ থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভোক্তা বান্ধব বাজেট প্রণয়নের দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের আয় হ্রাস, ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের দৌরাত্ম্য, অবৈধভাবে অর্থ পাচার ইত্যাদি বাস্তবতাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে ভোক্তার কাছে প্রতীয়মান হয়নি। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, এই বাজেট কতটা জনবান্ধব হলো?
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে বাজেটে গৃহীত কয়েকটি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি সার্বিক মূল্যস্ফীতি থেকে অনেক বেশি, প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু বাজেটে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধিসহ বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা বা ব্যবস্থা নেই। প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু পণ্যের কর ও ভ্যাট কমানো হয়েছে। নিত্য পণ্যের সরবরাহে উৎসে কর কমানো হয়েছে ১ শতাংশ। এতে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ছাড় পাবেন। তবে এর সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে।
মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তারপরও বাজেটে মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবায় সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হবে না। যেখানে সম্পূরক শুল্ক থাকারই কথা না, সেখানে উল্টো বাড়ানো হয়েছে। এটা সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। নাগরিকদের ব্যবহৃত ফ্রিজ, এসির ওপর শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে সীমিত আয় ও মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে। বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা নৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য। এ ধরণের ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজ দুষ্টচক্রকে আরও প্রণোদিত করবে। এমন বিধান রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। তাই ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এ ব্যবস্থা থেকে সরকারের সরে আসা উচিত বলে ভোক্তা মনে করে।
এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বরাদ্দ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এবারের বাজেটে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা, শিক্ষা বৃত্তি, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপানো ইত্যাদি খাত এই বরাদ্দে অন্তর্ভুক্ত। পেনশন আর সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সামাজিক সুরক্ষা খাতে যুক্ত করা যুক্তিসংগত নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভোক্তার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর, ভাইস চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন নওরোজ, পরিচালক লুৎফর রহমান লিটন, ড. লতিফুল বারী, মহসীনুল করিম লেবু, সাইদুল সাইদুল আবেদীন ডলার, মিজানুর রহমান তালুকদার, নূরুন নবী, গোলাম কবীর ও ফজলুল হক প্রমুখ।
ভোরের পাতা /আরএস