পাহাড়ে আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম। শুক্রবার বিকেলে খোদ রাঙামাটি পৌর শহরের আসামবস্তি এলাকায় সড়কের চলমান উন্নয়ন কাজে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এসময় কাজে নিযুক্ত থাকা শ্রমিকদের মারধর করে তাদের কাছে থাকা অন্তত ৬টি মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে শ্রমিকরা জানিয়েছে।
ঘটনার সময় উন্নয়ন কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডি’র কার্যসহকারি রেজাউল করিম প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। মাত্র কিছুদিন আগেও এই একই আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে জেএসএস এর নামধারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের কাছ থেকে ৯টি মুঠোফোন নিয়ে গেছে বলে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই ঘটনার পর আসামবস্তি ব্রীজ সংস্কারের কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
রাঙামাটির সাথে কাপ্তাইয়ের সংযোগ সড়ক যোগাযোগে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আসামবস্তি কাপ্তাই সড়কটি তৈরি করে এবং পর্যায়ক্রমে এই সড়কটিকে নানামুখি উন্নয়নের মাধ্যমে নয়নাভিরাম করে গড়ে তুলছে। ইতোমধ্যেই এই সড়কটি অন্যতম প্রধান পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে। সড়কের উভয় পাশে^ই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পর্যটন স্পট। সাম্প্রতিক সময়ে এই সড়কে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধা দিয়ে ঠিকাদারদের কাছে শতকোটি টাকা চাঁদা দাবি করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। চাঁদার দাবিতে গত দুই বছরে একাধিকবার গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ চালকদের মারধর ও ঠিকাদারের লোকজনসহ বনবিভাগের লোকজনকেও আটকে রেখেছিলো জেএসএস নামধারী অস্ত্রধারীরা।
সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে আসামবস্তি ব্রীজের পরে আধাকিলোমিটার পরেই কাপ্তাইমুখী সড়কের কাজ চলাকালিন সময়ে অস্ত্রধারি পাঁচ যুবক অতর্কিত হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। শ্রমিক মোঃ আকতার হোসেন জানিয়েছেন, আমরা প্রতিদিনের ন্যায় সকলে মিলে কাজ করছিলাম। বিকেল চারটার সময় আকস্মিকভাবে ৫/৬ জন চাকমা যুবক দুইটি রিভলবার হাতে নিয়ে এসেই আমাদেরকে এলোপাতারি মারধর করতে থাকে। এসময় আমারসহ আমার সহকর্মী রুবেল, শামীম, আকাশ, রিপনসহ মিস্ত্রির আরো দুই সহযোগির কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে রাঙামাটির এলজিইডি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাননি। নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন জানিয়ে একজন উদ্বর্তন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেই জানিয়েছেন আসামবস্তি সড়কে বর্তমানে ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি’র ওই কর্মকর্তা বলেন, এতোদিন দূর্গম এলাকাগুলোতে ব্যাপক চাঁদাবাজি করলেও সাম্প্রতিক সময়ে একেবারে রাঙামাটি শহরেই প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি শুরু করেছে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট্য কাজের ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, কাজ শুরুর আগেই উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের চারটি গ্রুপকে ৫ পার্সেন্ট হারে চাঁদা দিয়েছি। এরই মধ্যে একাধিকবার হামলা চালিয়ে চাঁদা নিয়েছে। বর্তমানে জেএসএস নামে ১০ পার্সেন্ট করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর আগের সিডিউল রেটে কাজ নিয়ে চারটি পাহাড়ি সংগঠনকে চাঁদা, অফিস খরছের পর আবার বর্তমান রেটে সরঞ্জাম কিনে কাজ বাস্তবায়ন করাটা চরম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় কাজ বন্ধ রাখার কোনো বিকল্প নেই বলেও জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।
এদিকে, সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে কেউ কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি বলে জানিয়েছেন, রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি আমি। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।