মোটরচালিত অটোরিকশা চলার দাবিতে গতকাল রাজধানীর মিরপুরে চলে দিনভর অবরোধ। রোববার (১৯ মে) সেখানে দিনভর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, দফায় দফায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, পুলিশ বক্সে আগুন ও পুলিশের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটে।
এসব অভিযোগে আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে তিন থানায় চারটি মামলা হয়েছে। পল্লবী থানায় দুইটি, কাফরুল থানায় একটি ও মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ।
সোমবার (২০ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা।
তিনি বলেন, রোববার দিনগত রাতে মিরপুরের পল্লবী থানায় মামলা দুইটি দায়ের করা হয়। একটি মামলা পল্লবী থানা পুলিশ ও আরেকটি মামলা পল্লবী ট্রাফিক জোন থেকে করা হয়। অন্যদিকে কাফরুল থানা ও মিরপুর মডেল থানায় পৃথক দুইটি মামলা পুলিশের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। গতকাল দিনভর আন্দোলন অবরোধের নামে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও পুলিশের ওপরে হামলার ঘটনায় এসব মামলা করা হয়।
মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজারের বেশি অটোরিকশা চালকদের। এসব মামলায় চার থানায় পৃথক অভিযানে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, রোববার দুপুরের পর থেকে রাজধানীর কালশী এলাকায় তাণ্ডব চালায় অটোরিকশা চালকরা। তারা নিচে রাস্তাসহ কালশী ফ্লাইওভার অবরোধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তারা বিকেলের দিকে কালশীর রাস্তা অবরোধ করে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তারা বিভিন্ন পরিবহনের একাধিক বাসে ভাঙচুর করেন। এছাড়া সর্বশেষ কালশী মোড়ে অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকরা। যে বা যারা পুলিশের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নাশকতার চেষ্টা করেছেন দায়ের করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পল্লবী থানায় করা দুইটি মামলার নথিতে দেখা যায়, পল্লবী থানার পক্ষ থেকে করা মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী। দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনী জনতাবন্ধে দাঙ্গা সৃষ্টি, সরকারী কর্তব্য কাজে বাঁধাদানসহ পুলিশের ওপর আক্রমন ও অপরাধমূলক বল প্রয়োগে সাধারণ ও গুরুতর জখম, ভাঙচুর করে জানমালের ক্ষতিসাধন, বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণ ঘটানো এবং বিস্ফোরক দ্রব্য হেফাজতে রাখা ও সহায়তা করার অপরাধ। মামলায় ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
মামলায় উল্লেখিত অপরাধ কাজের জড়িত থাকা অভিযোগে ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত অভিযুক্ত করা হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জনকে।
অন্যদিকে একই থানায় ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমের পক্ষ থেকে করা মামলার বাদী সার্জেন্ট মিন্টু চন্দ্র দে। অন্য মামলার মতো এতেও একই অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ টাকা। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে অজ্ঞাত ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান বলেন, পল্লবী থানায় দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় ১৫ অটোরিকশার চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখিত ও অজ্ঞাত অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সির সাব্বির আহমেদ বলেন, দায়ের করা মামলা এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধার সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলম জানান, কাফরুল থানায় দায়ের করা মামলায় ৬০০-৭০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ জন। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা-হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে।
এর আগে, রোববার (১৯ মে) সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর-১০ ও আগারগাঁও এলাকার সড়কের একাধিক স্থানে অবস্থান নেন চালকরা। পরে দুপুর থেকে রাজধানীর কালশী এলাকায় তাণ্ডব চালায় অটোরিকশা চালকরা। একপর্যায়ে তারা বিকেলের দিকে কালশী মোড়ে অবরোধ করে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তারা বিভিন্ন পরিবহনের একাধিক বাসে ভাঙচুর করেন। এছাড়া, সর্বশেষ কালশী মোড়ে অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকরা।
ভোরের পাতা/আরএস