প্রকাশ: সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ২:০৭ পিএম আপডেট: ২০.০৫.২০২৪ ২:১০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মেডিটেশন হলো মনের ব্যায়াম। নীরবে বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলনে বৃদ্ধি পায় মনোযোগ ও সচেতনতা। মনের স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণে সৃষ্টি হয় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। প্রশান্তি আর সুখানুভূতি বাড়ানোর পাশাপাশি গভীর আত্মনিমগ্নতা আত্মশক্তির জাগরণ ঘটায় ভেতর থেকে। আর অন্তরের এই জাগরণই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সামগ্রিক জীবনে। তাইতো বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ নিয়মিত মেডিটেশন করেন। চিকিৎসা, শিক্ষা, সৃজনশীল উদ্যোগ সবখানেই দিন দিন ধ্যানের এমন বিস্তার লাভের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই আগামীকাল ২১ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস।
আমাদের দেশে মেডিটেশন দিবস পালনের মূল উদ্যোক্তা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো ২১ মে মঙ্গলবার উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে দিনটি। জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সকাল ৬টায় থাকছে বিশেষ কর্মসূচি। ঘণ্টাব্যাপী আয়োজনে একত্রিত হবেন সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, গৃহিণীসহ নানা বয়সী নানা পেশার শত শত মানুষ। দিবস উপলক্ষে শিশুতোষ ছড়া ও গল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মেডিটেশনের গুরুত্ব ও উপকার নিয়ে কোয়ান্টাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ বুলেটিন। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে একই সঙ্গে সকাল ৬টায় এবং দেশের বাইরে ইউরোপ, আমেরিকা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ধ্যানমগ্ন হবেন দিনটিতে।
আত্মশক্তির বিকাশ, রোগ নিরাময়, সাফল্য কিংবা প্রশান্তি লাভে মেডিটেশনের গুরুত্ব এখন প্রমাণিত সত্য। নিয়মিত অনুশীলন মানুষের ভেতরের ইতিবাচক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত চর্চায় কমে যায় মনের রাগ ক্ষোভ দুঃখ হতাশা টেনশন স্ট্রেস কিংবা মানসিক চাপ। নেতিবাচকতা থেকে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় ইতিবাচকতায়। সমমর্মী হয়ে ওঠে মন। ফলে পারিবারিক পেশাগত সামাজিক সম্পর্কগুলো আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। আর এমন প্রায়োগিক কার্যকারিতায় বিশ্বজুড়ে মেডিটেশন হয়ে উঠেছে নিরাময়ের বিকল্প পদ্ধতি, সাফল্যের অব্যর্থ প্রক্রিয়া ও প্রশান্তির লাগসই টেকনিক হিসেবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও লাখ লাখ মানুষ মেডিটেশন করে নিজেদের জীবন-যাপনকে অর্থবহ করে তুলছেন।
হৃদরোগ, ক্যান্সার, ফুসফুসের জটিলতা, লিভার সিরোসিসসহ আরও নানা রোগের মূলে রয়েছে টেনশন বা স্ট্রেস। স্ট্রেস মুক্তির জন্যে মেডিটেশন এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। স্ট্রেস মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের শত শত হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রতিরোধমূলক যতœ হিসেবে রোগীদের যোগ-মেডিটেশন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বোস্টনের মাইন্ড বডি মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. হার্বার্ট বেনসন তার ‘ব্রেকআউট প্রিন্সিপাল’ নামের বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, মনকে শিথিল করার মাধ্যমে কীভাবে একজন মানুষ তার মানসিক সামর্থ্যকে তুঙ্গ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে এবারের দিবস। ভালো ভাবনা, ভালো বলা, ভালো করা আর ভালো থাকার প্রত্যয়ে দেশকে স্বর্গভূমি বানাতে সর্বসাধারণের মধ্যে মেডিটেশনকে ছড়িয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবি। মেডিটেশন দিবসের প্রত্যাশা, নিয়মিত চর্চার মধ্যদিয়ে ধ্যান একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে। আর নিয়মিত চর্চায় সমমর্মিতা নিয়ে এ দেশ রূপান্তরিত হবে সুস্থ সবল কর্মদ্যোমী সুশৃঙ্খল মানবিক এক মহাসমাজে।