বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মুমিনুল হককে চাকরিচ্যুত!
সরকারি চাকরি আইন লঙ্ঘন করে বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সুনামগঞ্জ) মোঃ মুমিনুল হককে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।
আদেশে বলা হয়েছে, মোঃ মুমিনুল হকের সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪০ এর উপধারা (১) বিধান লঙ্ঘন করে বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই আইনের ধারা ৪০ এর উপধারা (২) অনুযায়ী তার চাকরি অবসান আদেশ প্রদান করা হলো। একই সঙ্গে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ কার্যকর হওয়ার তারিখ (০১/১০/২০১৯) থেকে পরবর্তী সময়ে মোঃ মুমিনুল হকের গৃহীত সকল বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা তার নিকট থেকে আদায় করারও আদেশ প্রদান করা হলো।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের আদেশে বলা হয়, ‘মোঃ মুমিনুল হক কানাডিয়ান পাসপোর্ট গ্রহণ করে ০২/০৭/২০২৩ তারিখ কানাডিয়ান পাসপোর্ট নং AJ৩৫৭৫২৭ ব্যবহার করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট QR৬৩৯ যোগে কানাডার টরোন্টোতে গমন করেন। তিনি কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় তাকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪০ এর উপধারা (১) ও (২) অনুযায়ী অভিযুক্ত করে বর্ণিত অভিযোগের দায়ে একই আইনের একই ধারার ৪০ এর উপধারা (৩) ও (৪) মোতাবেক কেন চাকরি অবসানের আদেশ প্রদান করা হবে না এবং একইসাথে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ কার্যকর হওয়ার তারিখ (০১/১০/২০১৯) থেকে পরবর্তী সময়ে সরকারের নিকট থেকে গৃহীত বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি কেন আদায় করা হবে না তা জানতে চেয়ে পত্র প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে/ই-মেইলে/WhatsApp-এ প্রেরণ করা হয়। নোটিশটি দেখা সত্ত্বেও নোটিশের জবাব দেননি এবং ডাকযোগে প্রেরিত নোটিশটি প্রাপককে ঠিকানায় খুঁজে না পাওয়ায় জারি না হয়ে ফেরত আসে।’
আদেশে আরো বলা হয়, ‘অভিযুক্ত কর্মকর্তা মোঃ মুমিনুল হক বিদেশী রাষ্ট্রের পাসপোর্ট/নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং নোটিশ পেয়েও নোটিশের জবাব না দেয়ায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪০ এর উপধারা (১) ও (২) এবং ধারা ৪০ এর উপধারা (৩) ও (৪) মোতাবেক তার চাকরি অবসানের আদেশ প্রদান এবং এ আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ (০১/১০/২০১৯) থেকে পরবর্তী সময়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত সকল বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি আদায়ের বিষয়ে পরামর্শের জন্য বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন (পরামর্শ) প্রবিধানমালা, ১৯৭৯-এর প্রবিধি ০৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনে পত্র প্রেরণ করা হয়।’
চাকরিচ্যুতির আইনী প্রক্রিয়া তুলে ধরে আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করে এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি অভিযুক্ত কর্মকর্তার চাকুরি অবসানের পাশাপাশি সরকারি চাকুরি আইন, ২০১৮ কার্যকর হওয়ার তারিখ (০১/১০/২০১৯) থেকে পরবর্তী সময়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত সকল বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি আদায় করার বিষয়টি অনুমোদন করেছেন।
‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় পর্যালোচনা করে মোঃ মুমিনুল হকের বিরুদ্ধে 'চাকরি অবসানের আদেশ' প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অভিযুক্ত কর্মকর্তার 'চাকরি অবসানের আদেশ' দন্ড আরোপের প্রস্তাব এবং সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ কার্যকর হওয়ার তারিখ (০১/১০/২০১৯) থেকে পরবর্তী সময়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত সকল বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা আদায়ের প্রস্তাব অনুমোদন প্রদান করেছেন।’
এদিকে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েক দিন ধরে তার সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসএমএম পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে হোয়াটস অ্যাপে কয়েক দফা চেষ্টার পর রোববার (১৯ মে) সকালে অপরপ্রাপ্ত থেকে কল রিসিভ করলেও বলা হয়, ‘তিনি বাইরে গেছেন মোবাইল রেখে। পরে কল করেন।’ এরপর দুপুরে আবার কল করা হলে ‘এটা মোঃ মুমিনুল হকের নাম্বার না’ বলে কেটে দেয়া হয়।