সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতাও বেড়েছে আগের তুলনায়। এরই মধ্যে দুদিন আগে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এরপরও বেতাল ভূতের মতো ঘাড়ে চেপে আছে লোডশেডিং।
হিসাব বলছে, উৎপাদনে রেকর্ডের কয়েকদিন না যেতেই রেকর্ড হয়েছে লোডশেডিংয়েও। গতকাল রবিবার দেশে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে এক হাজার ৮৬০ মেগাওয়াট, গত এক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশজুড়ে লোডশেডিং অব্যাহত। ২৮ এপ্রিল দুপুর ১২টায় এই লোডশেডিং পৌঁছায় এক হাজার ৮৬৪ মেগাওয়াটে।
পিজিসিবি কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও তাপপ্রবাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ও তার চাহিদার মধ্যে পার্থক্যের কারণেই লোডশেডিংয়ের সৃষ্টি হয়।
এদিকে আবার বিভিন্ন বিদ্যুৎ সংস্থার গ্রামীণ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লোডশেডিংয়ের মাত্রা এনএলডিসির দেখানো সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থানীয়ভাবে হওয়া বিঘ্নগুলো সবসময় তালিকাভুক্ত হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) একজন কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় বিভ্রাট বিবেচনায় নিলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ দুই হাজার মেগাওয়াটের চেয়েও বেশি হতে পারে।
তার তথ্যমতে, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট এত ঘন ঘন হয় যে, কোনো সমস্যা হলে গ্রাহকদের দিনে ও রাতে উভয় ক্ষেত্রেই কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বিদ্যুৎ ফিরে পেতে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে দিনের চাহিদার পূর্বাভাস নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট এবং সান্ধ্যকালীন চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর বিআরইবি বলছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর বাসিন্দাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
এদিকে রেকর্ড উৎপাদনের মধ্যেও লোডশেডিং বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে গ্যাস সংকটের ব্যাপারটিও। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার হাজার এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে তিন হাজার ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট। উৎপাদিত এ গ্যাসের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ ব্যবহার করে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
বিশেষ করে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের বেশিরভাগেরই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। রবিবারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই হাজার ৩১৭ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে ওইদিন এক হাজার ৪২৩ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
ভোরের পাতা/আরএস