একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। যারা বিষয়টি নিয়ে ‘এক্ষুনি...লিখে ফেলছেন’ তাদেরকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন বেনজীর।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশের পর তা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সংবাদগুলোতে নিজের কোনো মন্তব্য দেননি বেনজীর আহমেদ। এরই মধ্যে মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান।
ফেসবুক পোস্টে বেনজীর লিখেছেন, “দু-একজন অনেক ক্ষিপ্ত, খুবই উত্তেজিত হয়ে এক্ষুনি সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ লিখে ফেলছেন। দয়া করে সামান্য ধৈর্য্য ধরুন। ঘোষণাই তো আছে কুৎসার কিসসা আভি ভি বাকি হ্যায়।”
২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে অবসরে যান বেনজীর। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে তিনি পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব পান। তার আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ছিলেন।
১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন বেনজীর আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর একই বিভাগ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। এরপর এলএলবি ডিগ্রিও অর্জন করেন। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন বেনজীর। র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের আগে তিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন।
বহুমুখী ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে বাহিনীতে প্রশংসিত ছিলেন বেনজীর আহমেদ। জঙ্গিবাদ দমন থেকে শুরু করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের ভূমিকা প্রশংসা পায়। এসব কাজের সৃজনশীল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান।
স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীতে ড. বেনজীরই প্রথম আইজিপি, যিনি অর্ধশতাব্দীর পুলিশ বিভাগে নানা ক্ষেত্রে সংস্কার আনেন, যোগ করেন নতুন নতুন ধারণা, যা বাহিনীকে আরও জনবান্ধব করে তোলে।
দেশের একেকটি ভিন্ন ধারার সংকটকালে পুলিশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। দায়িত্ব পালনকালে পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। সাহসিকতা, দক্ষতা আর সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণ পুলিশ বিভাগে তৈরি করেছে তার অসামান্য ডায়নামিক অবস্থান।
রাজধানী ঢাকায় যখন জঙ্গিরা আস্তানা গাড়ছিল, রাজনৈতিক সন্ত্রাসে অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় নগরবাসী, তখন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে। এই গুরুদায়িত্ব নিয়েই দশম সংসদ নির্বাচনের আগে উত্তুঙ্গ পরিস্থিতিতে সারা দেশ একরকম অচল হয়ে পড়লেও রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হন বেনজীর আহমেদ।
এরপর র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব যখন পান, তখন বাহিনীটির ভাবমূর্তি তলানিতে। বেনজীর আহমেদ র্যাবের দায়িত্ব নিয়েই বাহিনীর উন্নয়ন, এর সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, জনগণের সঙ্গে সেতুবন্ধ রচনা করে অনন্য অবস্থানে নিয়ে যান।
আইজিপি থাকাকালীন বেনজীর আহমেদ জনমুখী সেবা চালু করতে থানা থেকে বের হয়ে পুলিশকে মানুষের দোরগোড়ায় নিতে একের পর এক সাহসী ও সময়োপযোগী নির্দেশনা দেন।
বেনজীর আহমেদ যখন পুলিশপ্রধান তখন তিনি পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে সংশোধন আনেন আইনের। এতে অনলাইনে আবেদন করা থেকে শুরু করে সব কিছু হয় স্বচ্ছভাবে। কোনো ধরনের ঘুষ ছাড়া নিয়োগ পান পুলিশ সদস্যরা।
সাবেক এই পুলিশপ্রধান যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে। তার হাত ধরেই থিতিয়ে যাওয়া দাবা উঠে আসে মূলধারায়। স্কুল পর্যায়ে তিনি দাবাকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন।