প্রকাশ: শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪, ৫:২৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বনানীর F R টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের বিচার আজো হয়নি।
বেলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা ৪৬ ছাড়িয়েছে। এর দায় অবশ্যই তাদের নিতে হবে যাদের গাফিলতির কারণে এই নির্মম হত্যাকান্ড সংগঠিত হলো। স্বজন হারাদের আর্তনাদ, অপূরণীয় ক্ষতি এবং অনেক পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যৎ কিভাবে নির্মমতায় শেষ হয়ে গেল, এর বিচার হবে কিনা জানিনা। বনানীর এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিলো, আমাদের ভবনগুলির অব্যবস্থাপনা এবং দেখভাল করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থার ব্যর্থতা। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি করেছিলাম একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে। তদন্তে ৬২ জনের দায় নিরূপণ হয়েছিল ভবন নির্মাণ এবং তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে দায়ীদের সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছিলাম দুর্নীতি দমন কমিশনকে। অপ্রিয় হলেও সত্য তদন্ত রিপোর্টে যাদের দায় নিরপেক্ষ হয়েছিল তাদের সকলের বিরুদ্ধে মামলা ও রুজু করা হয়নি। আরো আশ্চর্য যে তদন্ত শেষে আরো অনেককেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয় সেই মামলার অভিযোগপত্র থেকে। যাদের দায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি নির্ধারণ করেছিল তাদের চেয়ে অনেক নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ দায়ীদের অব্যাহতি দিয়ে দিলেন। অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের জামিন হয়ে গেলো। এমনও নজির রয়েছে, কোন কোন আসামীকে একদিনের জন্যেও জেল হাজতে যেতে হয়নি। বিচারে শাস্তি হওয়া তো অনেক দূরের কথা। যতদূর জানি এই মামলার বিচার আজও হয়নি। ওই ঘটনা দেশি-বিদেশি সকল গণমাধ্যমে ব্যাপক সংবাদ সৃষ্টি করেছিল। ওই ঘটনার পরে ফায়ার ব্রিগেড সিভিল সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে অনেক ইকুইপমেন্ট আনা হয়েছে। রাজউক সহ অন্যান্য সংস্থাকে এজাতীয় ভবনের তদারকের উপরে গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বলতে আমার দ্বিধা নেই, সবকিছুই স্থিমিত হয়ে যায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই। এভাবেই অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ভূলুণ্ঠিত করে দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রভাবশালীদের হাত অনেক লম্বা। তারা সবকিছুই ম্যানেজ করে ফেলতে পারেন। বেলিরোডের নির্মমতা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করলেও অনেকেই এই সকল অগ্নি ঘটনায় দায়ীদের বাঁচাবার জন্যই তৎপর হয়ে যান। নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুড এর ঘটনায় পোড়া দেহগুলি স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করার পূর্বেই জামিন হয়ে গেল আসামিদের। আমাদের বিবেক কি, নির্বাক হয়ে এসব দেখেই যাবে? নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া কি আর বলার আছে?চিকিৎসাধীন যারা তাদের আরোগ্য কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোন। এই দায় দায়ী অপরাধীরা যেহেতু শক্তিশালী, তাদের হাত অনেক লম্বা, তাই তাদের নিয়ে না হয় কোন মন্তব্য করলাম না।
(লেখাটি সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া)