কোন ধরনের ক্ষতিকারক মিশ্রন ছাড়াই শুধুমাত্র লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিষমুক্ত শুটকি। আর সমুদ্রপাড়ে খোলা আকাশের নিচে কেবল রোদের আলো এবং বাতাসের সাহায্যে কাঁচা মাছ শুকিয়ে বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। আর শুটকি প্রেমীরাও উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুটকি কিনতে ছুটে আসছেন দুর-দুরান্ত থেকে। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হওয়ায় কুয়াকাটার শুঁটকির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণের নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় সৈকতের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। এতে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় স্থায়ী শুটকি পল্লী নির্মানের দাবি ব্যবসায়ী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কর্মীদের।
সুস্বাদু হওয়ায় দেশে ও বিদেশের রয়েছে আলাদা চাহিদা। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছরই এ শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তাই এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করণের স্থায়ী পল্লী না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ শুটকি শ্রমিকরা। বিপুল রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা মৌসুম নির্ভর এ ব্যবসার স্থায়ীত্বের পাশাপাশি স্থায়ী পল্লী নির্মাণ এবং এ শিল্পের পরিধি বাড়াতে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সকলের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামুদ্রিক মাছের সহজলভ্য প্রাপ্তির ফলে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কুয়াকাটায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম। এ কাজে অংশ নেয় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ পরিবারের সকল সদস্যরা।
সূত্রমতে জানা যায়, কোনো কীটনাশক ছাড়া শুধুমাত্র লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এর রয়েছে আলাদা স্বাদ ও চাহিদা। তবে নির্দিষ্ট কোনো পল্লী না থাকায় বছরের ৬ মাস চলে এ ব্যবসা। ফলে বছরের বাকি ৬ মাস কর্মহীন এবং নায্য মজুরি পায় না বলে দাবি শুটকি শ্রমিকদের। তাই তারা সরকারের কাছে স্থায়ী পল্লী নির্মাণের দাবিসহ আর্থিক প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুটকি উৎপাদনে নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না দোকানিরা। তাই কুয়াকাটার শুটকি ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী শুটকি পল্লী নির্মানের দাবি উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিকভাবে দর্শনার্থীদের কাছে বিখ্যাত হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে আগতদের কাছে সুনাম কুড়াচ্ছে এই পর্যটন নগরীর বিষমুক্ত শুটকি। যা ইতো মধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনের কেন্দ্র বন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ঘুরতে আসা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে কুয়াকাটার শুটকি এখন অন্যতম। তবে শুটকি উদপাদনে সরকারী কিংবা বে-সরকারীভাবে নির্দিষ্ট কোন পল্লী না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট অস্থায়ী ভাবে প্রক্রিয়াজাত করছেন উৎপাদন কারীরা। চলতি মৌসুমে ও ভ্রাম্যমান অবস্থায় লেম্বুর বন, নিজামপুর, গঙ্গামতি, ধুলাসার ঢোসসহ সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুকানেরা হচ্ছে শুটকি। তবে কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই শুধুমাত্র লবন মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরী করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের শুটকি মাছ। আর এ পল্লীতে দেখা মেলে পোয়া শুটকি, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্রা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির সুস্বাধু শুকানো মাছের। ফলে প্রতিনিয়ত শুটকি পল্লীতে পচন্দের শুটকি সংগ্রহে ভীড় জমান পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক রহিম উদ্দিন জানান, আমরা শুটকি প্রেমী মানুষ, দেশের বিভিন্ন এলাকার শুটকি খেয়েছি। কিন্তু কুয়াকাটার শুটকির কথা শুনে এখানে এসছি। ভ্রমণ শেষে বেশকিছু শুটকি নিয়েছি। এক কথায় অসাধারণ শুটকি,কারণ মেডিসিন ছাড়াই রোদে শুকানো হয়। এমনকি কোন তেমন গন্ধও নেই।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জিন্নাত- জাহানারা দম্পতি জানান, বহুদিন ধরে অফিস কলিকদের কাছে কুয়াকাটার শুটকির কথা শুনেছি। তাই কুয়াকাটায় এসেছি। এসে দেখলাম আসলেই প্রাকৃতিকভাবে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তাই লইট্রাসহ কয়েক ধরনের শুটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি স্বজনদের গিফট করবো।
এদিকে লেম্বুর বন এলাকার শুটকি উৎপাদনকারী হানিফ জানান, সৈকতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শুটকি মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। প্রতি বছরই তাদের বিভিন্ন কারনে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে।