জার্মানির এই পদ্ধতি অনুসরন করে বাংলাদেশও জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে পারে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩, ৭:২২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
খালি বোতল জমা দিয়েই হবে কেনাকাটা। অবাক লাগছে বিষয়টা? আবাক লাগলেও এটাই সত্যি! ইউরোপের ইঞ্জিন বলা হয় জার্মানিকে। উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, নাগরিক সুযোগ সুবিধার কারনে জার্মানি অনেকের স্বপ্নের দেশ। ব্যবহৃত যে কোনো বোতল নির্দিষ্ট বুথে জমা দিলেই দেয়া হয় একটি টোকেন। জার্মানিতে প্রায় সব সুপার মার্কেটগুলোর সামনেই এসব বুথ লক্ষ করা যায়। কেউ ব্যাগে করে কেউবা গাড়িতে করে নিয়ে আসেন তাদের ব্যবহৃত বোতল। স্বয়ংক্রিয় এসব মেশিনে সবাই তাদের খালি বোতল গুলো জমা দেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসে একটি টোকেন। সেই টোকেন দিয়েই কেনাকাটা করা যায় সুপার শপে।
মূলত কেউ যখন কোনো পানীয় পণ্য কিনে তখন বোতলের দাম সেটির সাথে যুক্ত করে আমানত হিসেবে রেখে দেন বিক্রেতা। ব্যবহার শেষে খালি বোতল জমা দিলে তাকে তার আমানত ফেরত দেয়া হয়। পুরো জার্মানিতে বিষয়টা এমনভাবে করা হয়েছে যে কেউ যে কোনো স্থানের বুথেই বোতল জমা দিতে পারেন। এর মানে যেখান থেকে পানীয় পণ্যটি কেনা হয়েছে সেখানেই সেটি ফেরত দিতে হবে বিষয়টা এমন নয়।
খালি বোতল ফেরত দিয়ে সেখানকার মানুষ মূলত তাদের নিজেরদের টাকাই ফেরত পাচ্ছেন। এরপরেও বিষয়টা জার্মানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই টাকা ফেরত পেয়ে আনন্দিত হন।
জার্মানিতে এসব ব্যবহৃত বোতল ফেরত দিলে সাধারনত ৮ সেন্ট থেকে ২৫ সেন্ট পর্যন্ত দেয়া হয়ে থাকে। পুনরায় বেশ কয়েকবার ব্যবহার উপযোগী গ্লাস বা প্লাস্টিকের বোতল এবং একবার ব্যবহার উপযোগী বোতল যেগুলো রেসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার করা যায় সেসব বোতল ফেরত নেয়া হয়ে থাকে সেখানে।
গ্রাহকদের কাছে খালি বোতল জমা দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ মনে হলেও এটার পেছনে কাজ করে লম্বা ও জটিল প্রক্রিয়া। বোতল গুলো ফেরত নেয়ার পরে সেগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট একটি স্থানে। সেখানে ব্রান্ড ও সাইজ অনুযায়ী বোতল গুলোকে আলাদা করা হয়। এরপর গ্লাস বা নিরাপদ প্লাস্টিক যেগুলো রিসাইকেল করে ব্যবহার করা যায় সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।
পুনরায় ব্যবহার যোগ্য বোতল রিসাইকেলিং এর এই প্রক্রিয়া জার্মানিতে কাচামাল, জ্বালানি ও কার্বন দূষন ব্যপকহারে কমিয়েছে। এতে করে নতুন বোতল তৈরীর জন্য জীবাশ্ম জালানীর ব্যবহার কমেছে বলেই মনে করেন জার্মান পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী এখন মারাক্তক চিন্তার বিষয়। জলবায়ু পরিবরতনের প্রভাব বাংলাদেশেও বেশ লক্ষনীয়। অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি , অস্বাভাবিক ঝরের প্রকোপ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম লক্ষন। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি কারন প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহার। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করেন। কিছু সংখক মানুষ কাচ ও মাটির পণ্য ব্যবহার করেন। এটাকে সহজেই কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। জার্মানির খালি বোতল ফেরত নিয়ে নগদ অর্থ বা টোকেন প্রদানের থিউরি আমরা কাজে লাগাতে পারি। যদিও বোতল ফেরত নেয়ার এই ব্যবস্থা জার্মানি ব্যতীত অন্যান্য দেশে একই ভাবে সফলতা পাবে কিনা তা নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। কেননা এই ধরনের ব্যবস্থা সফলতা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
তবে পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের প্রভাব কমানোর এর চেয়ে ভালো পন্থা এখনো বের হয়নি। এটি করলে মানুষ যেখানে সেখানে বোতল ফেলবেন না। কারন তারা এটি ফেরত দিলে টাকা বা টোকেন পাবেন। নতুন প্লাস্টিকের বোতলের উৎপাদন কমবে, রিসাইকেলিং প্রক্রিয়া সহজ হবে। আমাদের রাস্তাগুলোও অনেক পরিচ্ছন্ন থাকবে।