#বন্যার্তদের জন্য মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে: ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। #বন্যা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পদক্ষেপ নিতে হবে: ড. অরবিন্দ সাহা। #সম্বলিত প্রচেষ্টায় এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবোই: শেখ মো. ফাউজুল মুবিন।
সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো সিলেট অঞ্চল। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। অকাল বন্যায় ভেসে গেছে লাখ লাখ মানুষের সাজানো সংসার। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের বানভাসি মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি, স্যালাইন ইত্যাদি। সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্নভাবে এসব বানভাসি মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু শুধু সরকার বা সংগঠনের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না, এসব অসহায় মানুষের পাশে আমাদেরও দাঁড়াতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৪৩তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, কুষ্টিয়ার ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শেখ মোহাম্মদ ফাউজুল মুবিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো সিলেট অঞ্চল। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। অকাল বন্যায় ভেসে গেছে লাখ লাখ মানুষের সাজানো সংসার। বানের স্রোত কেড়ে নিয়েছে মা-ছেলেকেও। ঘরবাড়ি ও স্বজনদের হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ। দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১৯ জুন থেকে অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক, এসএসসি ভোকেশনাল ও মাদরাসা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চল তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। শুক্রবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার ভয়াবহতা বাড়তে থাকায় সুনামগঞ্জের পর সিলেটও এখন সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই জেলার বেশিরভাগ হাসপাতালে পানি ঢুকে যাওয়ায় জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতেও সমস্যা হচ্ছে। পানিবন্দী এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই এখন বন্যাকবলিত মানুষের জন্য বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোয় আমাদের একমাত্র দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সেই সঙ্গে ভারতের আসাম ও মেঘালয় হতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আসায় এবং সিলেট সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ভরাট হওয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। এ বন্যার কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সকল স্তরের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বন্যায় কবলিত হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শহর অঞ্চলের সমস্ত রাস্তাঘাট। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট, বাসস্থান, পুকুরের মাছ। গোলা ভরা ধান, গোয়ালের গরু, বসবাসের শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও এখন পানির নিচে। অত্র অঞ্চলের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে বাইরে হাঁটু সমান পানি, দাঁড়ানোর মতো এক টুকরো জায়গা অবশিষ্ট নেই। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের বানভাসি মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি, স্যালাইন ইত্যাদি। সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্নভাবে এসব বানভাসি মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু শুধু সরকার বা সংগঠনের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না, এসব অসহায় মানুষের পাশে আমাদেরও দাঁড়াতে হবে।
শেখ মোহাম্মদ ফাউজুল মুবিন বলেন, প্রথমে আমি দুঃখ প্রকাশ করতে চাচ্ছি তাদের প্রতি যারা সম্প্রতি সিলেটে বন্যার শিকার হয়েছে, যারা অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে সেখানে দিনাতিপাত করছে। এবার দুর্যোগের সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আসলেই অনেক কার্যকর হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুবই শক্ত ভাবে একশন নিয়েছে। এবার বন্যায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনী। যেভাবে তারা পানির মধ্য থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মানুষদের তারা সহযোগিতা করেছে সেটা সত্যি প্রশংসনীয়। বন্যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসহনীয় এক অভিশাপ। একেকটা বন্যা আমাদের কয়েক বছরের জন্য পঙ্গু করে দিয়ে যায়। বন্যা প্রতিরোধে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতাই পারে বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে। সার্বিকভাবে আমি বলতে চাই সরকারী সংস্থা, লোকাল প্রতিনিধি সহ সকলের সম্বলিত প্রচেষ্টায় আমরা দুর্যোগ অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি।