
হৃদরোগে চিকিৎসাধীন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহেল সানির পায়ে প্যাটেলা প্রতিস্থাপনে উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রোগমুক্তি কামনা করে শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়ে সহানুভূতিও জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও টেলিফোনে সোহেল সানির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে রোগমুক্তি কামনা করেছেন।
গত ১৫ মার্চ সোহেল সানি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নেয়া হয়। পরে বসুন্ধরা গ্রুপ চিকিৎসার দায়িত্ব নিলে তাকে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউ থেকে নেয়া হয় কেবিনে। তার Angiogram- এ ৪টি ব্লক ধরা পড়ে। কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ সাইদুর রহমান খান ৩ এপ্রিল হৃদয়ন্ত্রে রিং বসানোর কথা বলেন।
এরই মধ্যে বিষয়টি নজরে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি সোহেল সানির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বলেন, চিকিৎসার যা খরচ লাগবে, তা তিনি দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোহেল সানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডাঃ জুলফিকার আলি লেলিন।
তার পরামর্শে রিং না বসিয়েই ২৮ মার্চ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক থেকে রিলিজ নেয়া হয়। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে কার্ডিওলজিস্টরা কম্পিউটারে সোহেল সানির Angiogram এর সিডি দেখে ব্লক হওয়ার কথাই জানিয়েই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ নির্ণয়ে ঘাড়ে এক্সরে করান। রিপোর্টে ঘাড়ে ত্রুটি পাওয়া যায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ার কারণ নির্ণয়ে প্যাটেলায় রডযুক্ত বামপায়ের এক্সরেও করা হয়। চিকিৎসকের মতে,প্যাটেলাটির কারণে বাম পা শুকিয়ে যাচ্ছে। হৃদরোগে আক্রান্তকালীন মেঝেতে পড়ার মূলে ডানপায়ের সঙ্গে বামপায়ের ভারসাম্যহীনতা এবং কার্নিশে মুখ থুবড়ে পড়ায় সামনের দাঁতগুলো পড়ে যায়। ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরী কেবিনে চিকিৎসাধীন সোহেল সানিকে দেখেন। বারডেমে তিনদিন দাঁতের চিকিৎসা শুরু হয়। ২৬ মার্চ দাঁতগুলো প্রতিস্থাপনের কথা ছিল। বারডেমে শুরু হয় পায়ের চিকিৎসাও। কিন্তু ২৮ মার্চ রিলিজ দেয়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি।
হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে আবারও ভর্তি করা হয় ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে। Angiogram করা হয় আবারও। এরপর দুটি আমেরিকান রিং বসানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোহেল সানির খোঁজখবর নিতে হসপিটালে যান বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা বিল দিতে পাঠান ডাঃ লেলিনকে। কিন্তু ফিন্যান্স বিভাগ জানায় বিল বসুন্ধরা গ্রুপ দেবে।
রিলিজ নেয়ার পর আবার পাঁচ জুন বুকে ব্যথা অনুভব হলে কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডাঃ ফৌজিয়া খানের পরামর্শে Tropin-i টেষ্ট করানো হয়। রিপোর্ট স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি হলে ইব্রাহিম কার্ডিয়াকেই ভর্তি হন সোহেল সানি। দুবার Tropin-i টেষ্ট করার পর দেখা যায়, স্বাভাবিক যেখানে থাকার কথা ৬৭.২ সেখানে প্রথম টেষ্টে ছিল ১৫৫.৮ দ্বিতীয় টেষ্টে তা বেড়ে ১৬৮.২। এরপর Angiogram করা হয়।
এতে যতটুকু ত্রুটি পাওয়া যায় তা ওষুধ সেবনেই নিরাময় হবে বলে আশ্বস্ত করেন চিকিৎসক। তারপরও সংশয়-সন্দেহের কারণে রোগীর দাবির মুখে আবারও Tropin-i টেষ্ট করা হলে দাঁড়ায় ১৯৩.২। আবারও পা ও দাঁতের চিকিৎসা শুরু হলেও
রিলিজ দেয়ায় তা আর হয়নি।
উল্লেখ্য ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি "রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজউদ্দিন প্রধান উপদেষ্টা পদ থেকে সরে না দাঁড়ালে হস্তক্ষেপ করবে সেনাবাহিনী শীর্ষক একটি রিপোর্টের জের ধরে ওদিন রাতে সোহল সানির ওপর হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করা হয়।
চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সোহেল সানিকে দেখতে যান আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মোজাফফর হোসেন পল্টু, বিএমএ সভাপতি সাবেক এমপি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বরিশাল-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শাহে আলম।
ফোনে শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক,আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দীন নাসিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাইফুজ্জামান শেখর এমপি, সাবেক এমপি রহিমউল্লাহ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার,স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজাল বাবু প্রমুখ।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সোহেল সানিকে সহানুভূতি জানিয়ে সুস্থতা কামনা করেন। দেখতে হাসপাতালে যান জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, দিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ নূরুল ইসলাম হাসিব ও বিএফইউজে দফতর সম্পাদক সেবিকা রানী দাস।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সোহেল সানির রোগমুক্তি কামনায় বিবৃতি দিয়েছে। সোহেল সানির সুস্থতা কামনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
গত ২৩ মে বরিশালের বানারীপাড়ায় সোহেল সানির বাড়িতে যান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও বরিশালের জেলাপ্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে যাওয়া সোহেল সানির রত্নগর্ভা মা'য়ের পদধূলি নেন। এসময় মা বেগম আছিয়া মালেক আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি অসুস্থ পুত্রকে সহানুভূতি ও ত্রিশ লাখ টাকার সঞ্চয়প্রত্র দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা করেন। উপস্থিত ছিলেন ইউএনও, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। সোহেল সানির দুই সহোদর বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক রাহাদ সুমন ও এক্সিম ব্যাংক বরিশাল বিভাগীয় ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক নাসির আহমেদ রুবেল তাদের অভ্যর্থনা জানান।