
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদনের পর থেকেই নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনকে কলংকিত করা হচ্ছে। আর এসব অপকর্ম হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সুমন হোসেনের নেতৃত্বে।
যত দিন যাচ্ছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে কলেজছাত্রকে টর্চার সেলে বিবস্ত্র করে মারধর ও ভিডিও ধারণ করে চাঁদা দাবি করেছে। সুমনের নির্দেশেই তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব তালা কলেজের একটি কক্ষে নিয়ে ছাত্রকে বিবস্ত্র করে অত্যাচার করা হয়, এমনকি তার পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করে।
এবার পাওনা টাকা চাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের ছত্রছায়ায় তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন রায়ের নেতৃত্বে গভীর রাতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১৬ মে) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তালা শহিদ আলী আহম্মদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রোডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ভুক্তভক্তি তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য বারুইহাটি গ্রামে মৃত আঃ রহিম সরদার ছেলে সরদার মামুন হোসেন বুধবার (১৮ মে) তালা প্রেসক্লাব হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সরদার মামুন বলেন, গত রবিবার আমি উপজেলা পরিষদের সামনে ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন রায়ের কাছে আমার পাওনা ২৭ হাজার টাকা ফেরত চাই। টাকা চাইলে মিলন রায় বলে আমার কাছে টাকা নেই। আমি এখন টাকা দিতে পারবো না। তখন এক পর্যায়ে মিলনের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়।
পরবর্তীতে সোমবার আনুমানিক রাতে ১২ টার দিকে আমার ব্যবসাস্থল থেকে বাড়ির পথে যাওয়ার সময় তালা শহিদ আলী আহম্মেদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রোডে মিলনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ টা মটরসাইকেল যোগে ৩০ থেকে ৩৫ জন রাম দা, হকস্টিক, নিয়ে আমার পথ রোধ করে। এ পর্যায়ে মিলন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। এছাড়া আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সরদার মামুন এ সময় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা চান।
জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে ৩১ বছরের মিলন কুমার রায়ের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়া লাখ টাকার বিনিময়ে তালা উপজেলার কমিটিতে বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্যদের ছাত্রলীগে পদ দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী সরদার মামুন বলেন, মিলন এলাকায় বলে বেড়ায় আমি টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়েছি। সুমন ভাই যতদিন জেলা কমিটিতে থাকবে, আমিও ততদিন তাল উপজেলার কমিটিতে থাকব।
তিনি বলেন, টাকা দিয়ে নেতা হওয়ার মিলন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন রায় জানান, আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক জানান, বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে দেখবো। দোষী হলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে এবিষয়ে জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমনের অপকর্মের ফিরিস্তি অনেক বড় বলেই দাবি করেছেন তার আশে পাশের লোকজন। একজন সংসদ সদস্যের প্রশয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই বেপোরোয়া চাঁদাবাজি করছে। এমনকি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে নিয়মিত চাঁদা নেয়ার পাশাপাশি সরকারি জমি থেকে মাটি বিক্রি করতে গিয়ে কয়েকবার জনগণের দৌঁড়ানিও খেয়েছেন। জাতীয় শোক দিবসে রক্তদান কর্মসূচীর নামে রক্তদান না করেই প্রতারণাও অভিযোগ রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
অপরদিকে প্রতারণাসহ নানান অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদকের বিরুদ্ধে। কমিটি গঠনের আগে সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুমন হোসেনের মা আম্বিয়া খাতুন জামায়াতের রোকন, চাচা জেলা জামায়াতের সুরা সদস্য এবং তিনি নিজে মাদকাসক্ত বলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও গিয়েছিল। গত বছরের মে মাসের ২৫ তারিখে ৮ সদস্য বিশিষ্ট সাতক্ষীরা জেলা ছাত্র লীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেখান থেকেই প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ উঠছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।