প্রকাশ: বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০১ পিএম আপডেট: ২৭.০৪.২০২২ ৫:১৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

স্বাধীনতার সুখ চিরায়ত বাংলার কবিতাখানি মনে হলে, মনে পড়ে যায় সেই শৈশবের মধুময় অনেক স্মৃতি। নিখুঁত শিল্পের কারুকাজ মন্ডিত কারিগর পাখির মধ্যে একমাত্র বাবুই পাখিই সেরা। এজন্য এ পাখিকে শিল্পের কারিগর পাখি বলা হয়। কবি রজনী কান্ত সেন রূপক অর্থে শিল্পের কারিগর বাবুই পাখিকে কেন্দ্র করে লিখেছেন তার অমর ছড়া কবিতা খানি। বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর, শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে। এছাড়া বাবুই পাখি নিয়ে রয়েছে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় বিভিন্ন গান।
জানা যায়, পৃথিবীতে ১১৭ প্রজাতির বাবুই পাখি রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৩ প্রজাতির বাবুই পাখি। যথাক্রমে দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। তবে দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও বাবুই পাখি নেই।
গ্রাম গঞ্জের পুকুরপাড়ে মাঠেরধারে অথবা নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা তাল, খেজুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির উঁচু গাছগুলো হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিলুপ্তির পথে নিপূন নির্মাণে ব্যস্ত নিজঘর বুনা শিল্পমনা রোমান্টিক বাবুই পাখি। এখন আর ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের গ্রাম বাংলার তালগাছ, খেজুঁর গাছ, নারিকেল গাছের মতো উঁচু কোন গাছের ডাল পালার মধ্যে সচরাচর দেখা যায়না ঝুলন্ত দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির এসব বাসা। গ্রামগঞ্জের কয়েক মাইল হেটেও দেখা মেলবে না বাবুই পাখি ও বাসা। শোনা যায়না তাদের কিচিরমিচির আওয়াজ কিংবা শব্দ। এ পাখিটি এখন বিলুপ্তের পথেই বলা চলে। জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি, কুকুটিয়া, বাড়ৈখালী ও হাঁসাড়া এলাকায় কয়েকটি তাল, খেজুর ও ইউক্লিবটর গাছে বাবুই পাখিদের আস্তানা গড়তে দেখা গেছে। তবে এ পাখি ও বাসার পরিমান খুবই সামান্য। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে মানুষের কবলে পড়ে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য উঁচু এসব গাছপালা। কেটে উজার করে ফেলা হচ্ছে চির সবুজের এসব বৃক্ষের সমরোহ। তৈরী হচ্ছে সব আধুনিক শহর ও ঘরবাড়ি। কালের বিবর্তনে হয়ত এক সময় আর বাবুই পাখির বাস চোখেই পড়বে না।
বির্স্তীণ আড়িয়াল বিল বাড়ৈখালীর এলাকার মদনখালী ডাঙ্গার পাড়ে খোলা উন্মুক্ত পরিবেশে থাকা বেশকিছু উঁচু গাছে বাবুই পাখির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিলের ক্ষেত থেকে ধানের পাতা ও ঘাসের আস্তরণ এনে মগডালে নিপুন কারুকাজে দৃষ্টিনন্দন বাসা বুনছে বাবুইরা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পুরুষ বাবুইদের বুনা বাসা পছন্দ হলেই স্ত্রী বাবুইরা ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের আঁধারে বাবুইরা নিজ বাসা আলোকিত করার লক্ষ্যে জোঁনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে। সকাল হলে জোঁনাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়!
এসব বাবুই পাখি এখন প্রায়ই বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। দেখার স্বাধ থাকলেও খুব সহজে খুঁজ মিলেনা এদের। সচারাচর এখন আর শুনা যায়না সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবুইদের কিচিরমিচির ডাক। তাই আমাদের একটু সচেতনতা অবলম্বনের মধ্যেই টিকি থাকতে পারে এ পাখির বংশ।