জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে এবার ১১ কোটি ২৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা লোপাটের অভিযোগ এসেছে। শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে বিষয়টি ভোরের পাতা নিশ্চিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সব ধরনের আর্থিক বিষয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে এবং শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর মহাপরিচালক কার্যালয়ের নিরীক্ষা দলের প্রধান মো. বাবুল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানা গেছে, শুধুমাত্র ৬ টি হলের বাউন্ডারি ওয়াল করার নামেই ১১ কোটি ২৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ডিপিপিতে বাউন্ডারি ওয়াল ধরা থাকলেও কার্যাদেশে বাউন্ডারি ওয়ালের কথা উল্লেখ করেননি সাবেক উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম এবং তার সহযোগীরা। ফলে প্রতিটি হলে বাউন্ডারি ওয়াল বাবদ ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা করে ৬ টি হলের জন্য মোট ১১ কোটি ২৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এদিকে, দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ সেশনে দায়িত্ব পালন করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সব ধরনের আর্থিক বিষয়ের তথ্য তলব করেছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। এর সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঈদ সালামি দেওয়াসহ টেন্ডার ও উন্নয়ন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সব ফাইল তলব করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ হতে ২০২০-২১ অর্থবছরের নিরীক্ষার জন্য এসব ফাউল ও নথি জরুরিভিত্তিতে নিরীক্ষার জন্য উপস্থাপনের অনুরোধ করা হয়। চাহিদার নথি ও তথ্যের মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ব্যাংক জমা, স্থায়ী/অস্থায়ী আমানতের তালিকা ও ব্যাংক বিবরণী; সব ব্যাংকের জমা-খরচের প্রতিবেদন; চেক রেজিস্টার ও চেক বই; পদোন্নতি ও অবসর অনুমোদন প্রতিবেদন; পেনশন ভাউচার; সেশন বেনিফিট সংক্রান্ত নথি; সাবেক ভিসির (ফারজানা ইসলাম) একান্ত সচিবসহ ৫ জনের অ্যাডহক নিয়োগ নথি ও তাদের ব্যক্তিগত নথি; উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত তহবিল হতে ২ কোটি টাকা অন্যদের ঈদ সালামি প্রদানের বিষয়ে যাচাই/তদন্ত প্রতিবেদন; উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন সংক্রান্ত সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী; উন্নয়ন প্রকল্পের ৬টি কাজের উন্মুক্ত দরপত্র নথি ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন; ২০১৯-২০ হতে ২০২০-২১ অর্থবছরের ভর্তি পরীক্ষার নথি ও পরীক্ষার পারিশ্রমিক বণ্টনের পরীক্ষা প্রতিবেদন; ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, প্রক্টর প্রধান প্রকৌশলী, কম্পট্রোলার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, জনসংযোগ অফিসার ও ডিন নিয়োগের ও ব্যক্তিগত নথিসহ ২০২৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ও বার্ষিক হিসাব।
এদিকে, ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম পেয়েছেন এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এছাড়া কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে পেয়েছেন আরও এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে সাবেক উপাচার্য পেয়েছেন দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তবে জানা যায় ভর্তি পরীক্ষার সময় তিনি একদিনও বাসভবন থেকে বের হননি।
অপরদিকে, সাবেক ভিসি ড. ফারজানার পুত্র প্রতীক হাসানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে ভিসির কার্যালয়ে বিদেশী মদের বোতল নিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে প্রতীককে। উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দরপত্রের একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন এই ভিসি পুত্র। এ ছবি ও আর্থিক কেলেংকারির বিষয়ে প্রতীক হাসানকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে, অর্থ আত্নসাৎ এবং নানা অনিয়মের বিষয়ে সাবেক উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলামকেও কয়েকবার ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি।