মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: ফরিদপুরে বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১১    তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে উদীচী    মঙ্গলবার আদালতের কাছে স্থায়ী জামিন চাইবেন ইউনূস    তাপপ্রবাহ থেকে শিশুদের রক্ষায় রোদে না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা    ১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৮৭ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার    ১২ মামলায় ইশরাকের জামিন    ঋণখেলাপি চিহ্নিত করতে প্রার্থীর তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
অশুভ সিন্ডিকেটের দখলেই মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রপ্তানির বাজার!
নেপথ্যে কেথারসিস ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির রুহুল আমিন স্বপন
উৎপল দাস, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: রোববার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:১৪ পিএম আপডেট: ২৭.০২.২০২২ ৬:৩৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নতুন সুযোগে এবারও আগের ১০ টি সহ মোট ২৫টি এজেন্সি সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠানোর কাজ বাগিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চলছে। এ অশুভ সিন্ডিকেটে বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন। 

এর আগে ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের অনিয়ম, দুর্নীতির ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এবারো কর্মী পাঠানো হলে জনশক্তি রপ্তানি আবারো বন্ধ হয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) নেতারা। ভোরের পাতার সাথে আলাপকালে বায়রা নেতারা এসব অভিযোগ করেন।

তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশে জনশক্তি পাঠাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও প্রতারণা বন্ধে করণীয় এবং মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সম্ভাব্য সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল ও সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানান।

বায়রা নেতারা দাবি করেন, স্বার্থান্বেষী মহলের এই সিন্ডিকেট বাস্তবায়িত হলে আগের মতো অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। গুটিকয়েক ব্যক্তির দেশবিরোধী ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি উপজেলার ১০০০ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও বাস্তবায়ন হবে না। শুধু তাই নয়, সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করলে কর্মী পাঠানোর গতি যেমন কমে যাবে, তেমনি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের ব্যবসার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। আগের মতো যে কোনো সময় বাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার ভোরের পাতাকে বলেন, ২০১৬ সালে মালয়েশিয়াতে ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শতভাগ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। অনিয়মের কারণে দুদক ও উচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বিধায় মামলা ধামাচাপা দিয়েছেন। মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ৩৬ হাজার টাকায় কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও নেয়া হয়েছে আড়াই লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা। এভাবে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে মালয়েশিয়ার এসপিপিএ নামে সংগঠন জড়িত। এক পর্যায়ে মাত্র দেড় বছরের মাথায় মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে গঠিত মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয়। এসপিপিএ নামে মালয়েশিয়ান কোম্পানির অটো ডিস্ট্রিবিউশন পদ্ধতি বাতিল করা হয়। ব্যাপক অনিয়মের ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে পুনরায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এবারো ২৫ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারো একই কায়দায় আরো আড়াইশ’ রিক্রুটিং এজেন্সিকে সহযোগী বা সাব এজেন্ট হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হলে বিদেশগামী নিরীহ কর্মী ও সিংহভাগ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক তাদের লালসার শিকার হবেন।

আগের ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের একজন, বায়রার সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নূর আলী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মালয়েশিয়ায় যে পদ্ধতিতে এজেন্সি নিয়োগ দিয়েছিল সে পদ্ধতিতে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বিষয়টি অনুধাবন করে এবার সে পদ্ধতি চাইছি না। কারণ, আমি জানতাম ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি শুধু সার্ভিস চার্জ নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম, সেই প্রক্রিয়া থেকে মূল উদ্যোক্তা মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী নূর ও বাংলাদেশের পার্টনার রুহুল আমিন স্বপন সরে আসছে। আমি যখন তাদের তৈরি সিস্টেমের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ করলাম, আমার সার্ভার ১৪ বার বন্ধ করা হয়েছে। মেডিকেল চেক ছিল আরো একটা প্রহসন। এক পর্যায়ে অনিয়মের কারণে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তাই এবার আর ওই সিন্ডিকেট প্রথা চাই না। 

যাবতীয় অনিয়ম বন্ধ করতে সব বৈধ এজেন্সির জন্য সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, মালয়েশিয়াতে লাখ লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে। সব এজেন্সির জন্য কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরির উদ্যোগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) এর প্রাক্তন নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন, শিল্প ও পণ্য মন্ত্রী দাতুক মাজাহ জুরাইদা বিনতি কামারউদ্দিনের সাথে ২৬ ফেব্রুয়ারি সাক্ষাৎ করেন, যেখানে উভয় পক্ষ অভিবাসন সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। 
অশুভ সিন্ডিকেটের দখলেই মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রপ্তানির বাজার!

অশুভ সিন্ডিকেটের দখলেই মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রপ্তানির বাজার!

বৈঠকে, দাতুক মাজাহ জুরাইদা বিন্তি কামারউদ্দিন কয়েক দশক ধরে মালয়েশিয়ার বৃক্ষরোপণ খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের জন্য প্রশংসা করেন এবং যোগ করেন যে তার দেশ বাংলাদেশী কর্মীদের উপর নির্ভরশীল এই খাতের জন্য এই দেশ থেকে আরও কর্মী নিতে আগ্রহী।

তিনি বায়রা নেতাদের জিরো কস্ট ফর্মুলা সম্পর্কে অবহিত করেন। এই পদক্ষেপের অধীনে, নিয়োগকর্তা দেশে এবং বিদেশে একজন শ্রমিকের সমস্ত অভিবাসন খরচ বহন করবে। অধিকন্তু, নিয়োগকর্তা সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী সংস্থাকে পরিষেবা চার্জ এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রদান করবেন।

মালয়েশিয়ার শ্রম আইন এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত, প্রতিটি শ্রমিক বেতন পাবেন ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত। তাছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকরা বাসস্থান, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন।

অভিবাসন সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে তিনি তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্ত নিয়োগকারী সংস্থার অংশগ্রহণের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন যে তিনি সরকার-অনুমোদিত সংস্থাগুলির প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক নীতি সমর্থন করেন না।প্রকৃতপক্ষে, তিনি বারবার এই জাতীয় নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান জানিয়েছেন।



কর্মী পাঠানোর সময়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয়কেই অবশ্যই স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কাজ করতে হবে, তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এমওইউতে উল্লেখিত একটি ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যাবে না।

সফররত মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর জবাবে বায়রার নেতারা বলেন, সব লাইসেন্সপ্রাপ্ত কর্মসংস্থান সংস্থার কাজ করার সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। তবেই অভিবাসনে দুর্নীতির আর কোনো সুযোগ থাকবে না। যেহেতু আরও গেটওয়ে থাকবে, তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অনেক কম খরচে আরও বেশি কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারবে।

সমঝোতা চুক্তিতে ২৫ টি লাইসেন্স সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই। তারা আরও বলেছে যে লাইসেন্সগুলি নিয়ে কোনও বৈষম্য থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশের সব লাইসেন্সের অবস্থা একই হবে। শ্রমবাজার একচেটিয়া হতে পারে না।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা মোহাম্মদ নূর আলী, মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, সাবেক যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান ও সাবেক অর্থ সচিব ফখরুল ইসলাম।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]