#বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের লবিং করছে বিএনপি-জামায়াত: সুলতান মাহমুদ শরীফ। #লবিস্ট ষড়যন্ত্র রুখতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: অ্যাড. কামরুল ইসলাম। #বাংলাদেশের উন্নয়নকে রুখতেই লবিস্ট ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে: ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। #বিএনপির লবিস্ট ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়: ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম লগ্ন থেকেই চক্রান্ত করে আসছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর যে দলটির জন্ম হয়েছে চক্রান্তের মধ্যদিয়ে সে দলটির কাছে চক্রান্ত করা নতুন কিছু নয়। তাদের চক্রান্ত ছিল বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং তারা এই কাজটি এখনো করে যাচ্ছে। আজ তারা যখন দেখছে জাতির পিতার রক্তের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে ছাই দিয়ে যে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশকে সব দিক থেকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সে সময়ে ষড়যন্ত্রকারীরা আরও সুক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করেছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৯৮তম পর্বে শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম এমপি, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছিল, তখন অ্যাড. কামরুল ইসলাম সাহেব অন্যান্যদেরকে নিয়ে এই যুদ্ধাপরাধীদের যাতে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষে দিনরাত্রি কাজ করছিলেন। আমরা লন্ডনে বসে আমার স্ত্রী ও উকিলরা সবাই মিলে কাজ করছিলাম যে, আইনের মাধ্যমে এই বিচারটি হচ্ছে সেটা ছিল সিদ্ধ ও সেই আইনের মাধ্যমেই যেন বিচার করা যায় সে অনুযায়ী কাজ করছিলাম আমরা। তখন এখানে দেখলাম যে তিনজন ব্রিটিশ পালামেন্টের সদস্য তারা ছিলেন এখানে আইনজীবীদের সর্বোচ্চ সদস্য। তারা তিনজন লোক ছিলেন তিনটি রাজনৈতিক দলের। এই তিনজন লোক আমাদেরকে তাদের পক্ষে লবিং করছেন যেন এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বন্ধ করা যায়। তারা যেহেতু তিনটা দলের লোক ছিলেন তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম তাদের সম্বন্ধে। তখন আমি খবর পেলাম যে তাদের এই লবিং কাজের জন্য দিন প্রতি ৬ হাজার পাউন্ড দেওয়া হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কোন লবিং কাজে লাগলো না এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হলো এবং তাদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল। আসলে এই লবিংয়ের কাজটা আমরাও করেছিলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা আমরা ব্রিটিশে সাড়ে ছয়শ এমপিদের সাথে লবিং করেছিলাম। এই লবিং করেছিলাম আমরা কিসের জন্য? অবশ্যই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য। দেশের যারা নাগরিক আছেন তারা দেশের জন্য লবিং করবে, দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য লবিং করবে। কিন্তু আজ আমরা বিএনপি-জামায়াতের যে লবিং দেখছি তা দেশের জন্য ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের পরতে পরতেই ষড়যন্ত্র দেখতে পাবো আমরা। এই লবিস্ট ষড়যন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সময়েও হয়েছিল এখনো হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলো তখনও কিন্তু একটা লবিং কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যা ছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের লবিস্ট ষড়যন্ত্রের একটি অংশ মাত্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা দেওয়ার জন্য সেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ হয়ে বহু লবিস্ট ফার্মে অর্থ লগ্নি করেছিল, তারা কিন্তু কোন কিছুতেই বিচারিক কাজ বন্ধ হয়নি। তাদের ফাঁসি ঠেকানোর জন্য বহু চেষ্টা করেছিল কিন্তু কারও ফাঁসি ইনশাআল্লাহ ঠেকাতে পারে নাই। তখন তারা কোটি কোটি টাকা করেছিল। এখন সামনে এসেছে ৩.৭৫ মিলিয়ন ডলারের লবিস্ট ষড়যন্ত্রের কথা। কিন্তু হিসেব করলে আরও অনেকগুণ টাকা খরচ করেছে তারা। পদ্মা সেতুর বন্ধ করার জন্য ড. ইউনুসের নেতৃত্বে কি কাজ না করেছিল এর কাজ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেটাতেও সফল হয়নি যার প্রমান আজ পদ্মা সেতু নিজেই যা আমরা সচক্ষে দেখছি। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আগে দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বাইরেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করেছে। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে আসছে। হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্র তাদের রাজনৈতিক শক্তি। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আগে দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বাইরেও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করেছে। দেশের স্বার্থের তোয়াক্কা না করে যারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লবিস্ট নিয়োগ করে তারা আর যাই হোক দেশের অর্থনীতিকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে, দেশকে বিতর্কিত করছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। আমাদের সবাইকে আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি যারা অপশক্তি আছে তাদেরকে যতক্ষণ না পর্যন্ত বিতারিত করতে পারবো ততখন না পর্যন্ত এই লবিস্ট অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি লাভ করতে পারবো।
অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম লগ্ন থেকেই ষড়যন্ত্রকারীরা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯৯ শতাংশ মানুষ অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙলার অপমার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলেন। তখনও কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিলেন। যুদ্ধের পর যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা দুর্দান্ত স্পৃহা নিয়ে জাতি গঠনের কাজ করে যাচ্ছিলেন ঠিক সে সময়ে প্রায় পুরো পরিবারসহ তাকে হত্যা করা হলো। আমরা দেখেছি কিন্তু তখন থেকেই চক্রান্ত চলেছ এবং সেই চক্রান্তের পেছনে তখন থেকেই লবিস্ট নিয়োগ হয়েছে এবং আজ আমাদের তথ্যমন্ত্রী বর্তমান সময়ে যে লবিস্ট ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন এবং তার সঙ্গে যে তথ্য দিয়েছেন তার সঙ্গে সংশয় প্রকাশ করার কিছু নেই। যখন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশে আখ্যায়িত করা হয়েছিল তখন থেকেই মূলত লবিস্ট ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ হয়েছিল কিন্তু আজকে এই তলাবিহিন ঝুড়ি কথাটি হাস্যরসে প্রমাণিত হয়েছে। আজ তারা যখন দেখছে জাতির পিতার রক্তের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে ছায় দিয়ে যে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশকে সব দিক থেকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সে সময়ে ষড়যন্ত্রকারীরা আরও সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করেছে। অতি সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশের একটি এলিট ফরসের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে নিষেধাজ্ঞার আসলো সেটির কিন্তু যতটা না ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হতে পারে তার থেকেও সহস্রগুণ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ২০১৫ সালে আমার সুযোগ হয়েছিল ইংল্যান্ডে যাওয়ার। সে সময়টায় আমরা সেখানে গিয়েছিলাম একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যদের সাথে। সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সেসময়কার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য এবং মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করা এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা। সে সময়ে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যার হেড কোয়ার্টার ছিল লন্ডনে যার বর্তমান সময়ে আলোচিত লবিস্ট ১২টি সংগঠনের মধ্যে তাদের নাম আছে। সে সময়ে তাদের দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বে যিনি ছিলেন তার সাথে আমাদের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছিল। তিনি পাকিস্তানি বংশদ্ভূত ছিলেন। তিনি সে সময় আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীদেরকে যেন ফাঁসিতে না দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তাহলে তাদের বলার একটা জায়গা থাকবে যে তারা কিছুটা হলেও অর্জন করতে পেরেছে। কারণ সবাইকে যদি ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তাদের আর কোন মুখ থাকবে না, তাদের জবাবদিহিতা করার কোন জায়গা থাকবে না। আজকের প্রসঙ্গে যদি ফিরে আসি সেটা হচ্ছে লবিস্ট ষড়যন্ত্র। এটি কিন্তু বিএনপির পক্ষে নতুন কিছু না, যে দলটির জন্ম হয়েছে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে সে দলটির কাছে চক্রান্ত করা নতুন কিছু না। তাদের চক্রান্ত ছিল বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং তারা এই কাজটি এখনো করে যাচ্ছে। একাত্তরে বাংলাদেশের যে অভ্যুদয় সেটা কিন্তু একটি রাষ্ট্রের পরাজয় নয় কিন্তু এটা একটা আদর্শের পরাজয় ছিল। যে দলটির সৃষ্টি হয়েছে ষড়যন্ত্র করার জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়নকে পেছনে টেনে নেওয়ার জন্য সেই দলটির কাছেতো আর নতুন কিছু আশা করা যায় না, বাংলাদেশকে পেছনে টেনে পাকিস্তানি কায়দায় পরিণত করার জন্য সুতরাং সেই দলটির কাছে থেকে এই ষড়যন্ত্র করা আর নতুন কিছু নয়।