#বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার: ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। #বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কোন জায়গা নেই: এইচ রহমান মিলু।
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২১, ১১:৫৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আজকে পুরো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এই ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি তারা বাংলাদেশকে অশান্ত করার জন্য নানাভাবে চক্রান্তে লিপ্ত আছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুদিন আগে এই যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি রেখেছি।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৯৯তম পর্বে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, অপরাজেয় বাংলার সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু, বঙ্গবন্ধু গবেষক পিস ফোরামের চেয়ারম্যন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, আমি প্রথমেই ভোরের পাতাকে ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছি এই জন্য যে, আজকে একটি চমৎকার বিষয় নির্ধারণ করার জন্য। আজকে পুরো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জেগে উঠেছে এই ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং যারা সাম্প্রদায়িক শক্তি আছে তারা এই বাংলাদেশটাকে অশান্ত করার জন্য নানাভাবে চক্রান্তে লিপ্ত আছে এখনো। আপনারা জানেন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুদিন আগে এই যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি রেখেছি। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রের যে চারটি মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল তার অন্যতম ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। যার নেতৃত্বে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে মানুষকে বুঝিয়েছিলেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র অর্থ ‘ধর্মহীনতা’ নয়। এর অর্থ যার যার ধর্ম সে সে শান্তিতে পালন করবে, রাষ্ট্র সেখানে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না আর রাষ্ট্র কোনও ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতাও করবে না। শেখ মুজিবকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর কয়েক সপ্তাহের মাথায় জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসেন। তিনি প্রথমে যে কাজটি করেন তা হচ্ছে সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র ধারাটি তুলে দেন। এরপর থেকেই মূলত সেই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ফের মাথা চাড়া দিয়ে তাদের উত্থান প্রকাশ করে। সম্প্রতি শারদীয় দুর্গোৎসবকে নিয়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতাটি ছিল সম্পূর্ণভাবে পূর্ব পরিকল্পিত। ওই ঘটনার জের ধরে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমন দেশটি কারও কাক্সিক্ষত ছিল না। বাহাত্তরের চেতনার সঙ্গে তা যায় না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। দলটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির দেশে পরিণত করার চেষ্টাকে কেবল রুখেই দেয়নি, অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংবিধানকেও সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই কুমিল্লার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে, এটাই আমাদের কাম্য।
এইচ রহমান মিলু বলেন, বাংলাদেশে আমরা বিগত ১২ বছর ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখে আসছি। সরকারি শক্তিশালী হবার কারণে এখন সবাই সরকারী দল। যখন আমি দেখি সাড়া বাংলাদেশে সবাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ করছে সেখানে যখন দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তিদের হামলা বা দাঙ্গা উগ্রবাদ তৈরি হয় তখন গাণিতিকভাবে যদি বলতে যায় তাহলে সত্যিকার অর্থেই এইগুলো কারা করেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। যে এলাকাগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলো হলো সেখানে আওয়ামী লীগের প্রতিটা সংগঠনের শক্তিশালী নেতাকর্মী আছে। আমার প্রশ্ন হলো তারা কোথায় ছিলেন সেদিন? তারা কেন এই হামলাগুলো ঠেকাতে পারলেন না? অথবা যদি আমরা উল্টো করে প্রশ্নটা করি যে তাদের মধ্যে কতজন ছিলো যে এই হামলার মধ্যে জড়িত ছিল। বিগত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড. মুরাদের একটি বক্তব্যকে নিয়ে অনেক ধরনের বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে। সেই বাজে মন্তব্যকারীদের একটা বড় অংশকে দেখতে পারছি কেউ ছাত্রলীগে কেউ বা যুবলীগের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের মাথায় ঢুকেছে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিল হলেই বাংলাদেশে ইসলামকে অবমাননা করা হচ্ছে! তাদের কাছে কথা একটায় যে আমি দল বুজি না আমার কাছে ইসলাম সব থেকেই বড়। এখন আমি তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চায় যে, প্রতিটা বিষয়কে সঠিকভাবে ব্যাবহার করার একটা নিয়ম আছে সেটা যদি আমি সঠিকভাবে ব্যাবহার করতে পারি তাহলে সেটা কাজে দিবে। আবহমানকাল ধরেই এ অঞ্চলের সব ধর্মের মানুষ মিলে-মিশে থাকছে। এটাই বাংলাদেশের মূল চেতনা, মানুষের মূল শক্তি। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশ আবার পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। গর্তে লুকিয়ে থাকা একাত্তরের পরাজিত শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরশাসকের অন্যতম পথিকৃৎ মেজর জিয়া, বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জামায়াতকে ফিরিয়েছিল। আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা কে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে বিভিন্ন লেবাসধারী জামাতি সাম্প্রদায়িক প্রেতাত্মারা।পঁচাত্তর পরবর্তী থেকে এখন অবধি এই জামাতি সাম্প্রদায়িক শক্তির মূল পৃষ্ঠপোষক, স্বৈর বীর্য থেকে গড়ে উঠা রাজনৈতিক দল বিএনপি। এখনই এদের বিষদাঁত উপরে ফেলতে হবে। এই বাংলাদেশে ধর্মীয় উস্কানিতে যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে এখন সময় এসেছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়ার। এইক্ষেত্রে ক্রস ফাইয়ার অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে।