এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের জন্য নতুন মহাজোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। প্রায় ৩০টি সংগঠনের সমন্বয়ে এই জোট গঠন করা হয়।
শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বক্তব্যে জানানো হয়, ১৯৮০ সালে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের কাছ থেকে প্রথমে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় ৫০ শতাংশ প্রারম্ভিক বেতন প্রাপ্তির সুযোগ পান। শুরু থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীরা বিভিন্ন সরকারের আমলে আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে শতভাগ বেতনসহ বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ বোনাস এবং শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ বোনাস ও নির্ধারিত হারে অবসর ও কল্যাণ ভাতা পাচ্ছেন। তবে চাকরি থেকে অবসরের ৩-৪ বছরের আগে শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসর-কল্যাণ ভাতা পান না এবং এ সময়ের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি নেই, প্রমোশন নেই, নেই অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধাদি।
এতে বলা হয়, উল্টো শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির অযাচিত অত্যাচার আছে। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগে অস্বচ্ছতা ও ক্ষেত্র বিশেষে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়।
কমিটি প্রথা বাতিল করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা উচিত বলেও তিনি দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ ও উৎসব ভাতা শতভাগে উন্নীত করতে লাগবে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা। আর বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা স্কেল ভিত্তিক প্রদানসহ স্থায়ী অবসর ও কল্যাণ তহবিল গঠন করে সরকার যদি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয় সরকারি কোষাগারে জমা করে এবং শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন কিছুটা সংস্কার করে আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী নির্ধারণ করে তাহলে অনায়াসেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা যায়।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, অর্থসচিব ও শিক্ষা সচিব বরাবর জাতীয়করণের আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই এমপিওভুক্ত শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে পারে।
উপস্থিত নেতারা বলেন, আজ আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মহাজোট গঠন করে আমাদের জাতীয়করণের দাবিটি আবারও সরকারের কাছে পৌঁছাতে চাই। জাতীয়করণ করলে ২০-৫০ টাকা বেতনে শিক্ষার্থীরা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করবে, ১৬ কোটি মানুষ তাদের সন্তানদেরকে একই মানের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াতে সক্ষম হবেন।
সর্বোপরি মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হবে এবং বন্ধ হবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ।
আজকের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের সরকারের কাছে প্রত্যাশা মুজিব শতবর্ষে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়, তবেই বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবো- এ বক্তব্যের বাস্তবায়ন হবে।
বিশেষ করে এ সরকারের হাত ধরে যদি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়, তাহলে এদেশের জনগণ, শিক্ষার্থী সমাজ ও শিক্ষক সমাজ এ সরকারকে আজীবন স্মরণ করবে।
বক্তব্যে আরও বলা হয়, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি যদি পূরণ করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে আমরা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
অনুষ্ঠানে মহাজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. মাঈন উদ্দিন, সদস্য সচিব অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন এবং সমন্বয়ক মো. রফিকুল ইসলাম ছাড়াও উপাধ্যক্ষ আব্দুর রহমান, শাহিদুল ইসলাম, আফজালুর রশিদ, বেনী মাদব, তালুকদার আব্দুল মান্নাফি, অরুফ সাহা, দিদার হোসেন, রতন কুমার দেবনাথ, মাওলানা আহাদুল ইসলাম, অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, আব্দুল্লা আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষক নেতা মতিউর রহমান দুলাল।
অনুষ্ঠানে এই মহাজোটের আহ্বায়ক হিসেবে অধ্যক্ষ মো. মাঈন উদ্দিন, সদস্য সচিব হিসেবে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন এবং সমন্বয়ক হিসেবে মো. রফিকুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন।
ভোরের পাতা/অ