প্রকাশ: সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১, ৫:৩৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
যখন শুনলাম কোটাসংস্কার আন্দোলন থেকে উদ্ভূত 'ছাত্র অধিকার পরিষদ' রাজনৈতিক দলে রূপ নিতে যাচ্ছে, আমি আকুল আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ভেবেছিলাম এদের হাত ধরেই বাংলাদেশে খালেদা-হাসিনা মল্লযুদ্ধের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। ড. আসিফ নজরুলকে রাষ্ট্রপতি; নুরুল হককে প্রধানমন্ত্রী, রাশেদ খানকে অর্থমন্ত্রী, হাসান আল মামুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধরে মনে-মনে মন্ত্রিসভাও গঠন করে ফেলেছিলাম। কিন্তু হঠাৎই দেখলাম বিবিধ অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে পিএম সোহেল নামক একজনের নেতৃত্বে নেতাদের একাংশ সংগঠনটি ছেড়ে চলে গেল। এরপর মামুন-সহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে তাদেরই সংগঠনের এক ছাত্রী একবুক জ্বালা বুকে নিয়ে 'বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ'-এর মামলা ঠুকে দিলো, কমিটি থেকে মামুন ও অন্য আসামিদের নাম চুকে গেল, সংগঠন আরো সীমিত হয়ে ঢুকে গেল সাপের খোলসে। খালেদা-হাসিনার দুঃশাসন থেকে মুক্তিলাভের স্বপ্ন আরেকটু ফিকে হলো। পরশু দেখলাম ফেসবুক চ্যাটিংয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে নুর রাশেদকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে, রাশেদও নুরকে পালটা বহিষ্কার করেছে অথবা ধরিয়ে দিয়েছে কারণদর্শাও নোটিস। মেসেঞ্জারে ঝগড়া হলে সাধারণরা করে ব্লক, অসাধারণরা করে বহিষ্কার!
অনেক দিন ধরেই আমার রাজনৈতিক কলাম লেখা হচ্ছিল না। উপযুক্ত উপলক্ষ পেয়ে বসে গেলাম তদন্তে। খোঁজ নিতে লাগলাম নিকট অতীতে ছোট দলগুলো কবে কীভাবে ভেঙেছে, দেড় সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কে কাকে বহিষ্কার পালটা-বহিষ্কার করেছে, বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলতে গিয়ে কোন কোন দল ঝাড়ে-বংশে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নুরদের সংগঠনটি এখনও রাজনৈতিক দল হিশেবে ঘোষিত না। রাজনৈতিক দল হিশেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই বাংলাদেশের কোন-কোন সিকি-রাজনৈতিক সংগঠনের অকাল গর্ভপাত ঘটেছে, এ ব্যাপারেও সামান্য খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছিলাম। আমার রাজনৈতিক কলামগুলো যেহেতু প্রচুর তথ্যে ভরা, সেহেতু একেকটা কলাম শুরুর আগে এক-আধ দিন এ রকম তল্লাশি অভিযান চালাতে হয়। আজ সকালে কলামটা লেখা শুরু করার নিয়ত ছিল। এরই মধ্যে শুনি নুর-রাশেদ পালটাপালটি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে, ব্রেকআপ মিটমাট করে প্যাচআপ করে ফেলেছে, পরস্পরকে আনব্লক করে নুরু-পুশি আয়শা-শফি মিলে আমবাগিচায় বনভোজন পাতিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি থাকাকালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এতটাই ঘনঘন মুড সুয়িং হতো যে, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা সকালে নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার আগে নাকি পত্রিকা পড়ে নিশ্চিত হয়ে নিতেন তাদের মন্ত্রিত্ব আছে কি নেই। এরশাদ কারো মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিলে তিনি তা নাকি ঐ মন্ত্রীকেও জানাতেন না, পত্রিকাগুলোকে বলে দিতেন এবং পত্রিকা পড়েই মন্ত্রীরা জানতে পারতেন মন্ত্রিত্ব থাকা না-থাকার খবর। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেন, না একা নির্বাচন করবেন; চারদলে যাবেন, না চৌদ্দদলে যাবেন; এ নিয়েও এরশাদের মুহুর্মুহু মুড সুয়িং হতে দেখেছি। কখন কাকে দলের মহাসচিব করছেন আর কখন মহাসচিব পদ থেকে তাকে খেদিয়ে দিচ্ছেন, কখন কোন স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন আর কোন স্ত্রীকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বানাচ্ছেন; এরশাদের এ সংক্রান্ত মুড সুয়িংও সর্বজনবিদিত ছিল। এরশাদকে হারিয়ে আমরা নুরকে পেয়েছি, জাতীয় পার্টির জায়গায় পেয়েছি ছাত্র অধিকার পরিষদকে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খেতাব ছিল পল্লিবন্ধু। ছাত্র অধিকার পরিষদের টাঙ্গাইল শাখা নুরকে দিয়েছিল জনবন্ধু না যেন যুববন্ধু খেতাব। নুররা আমাকে একটা পূর্ণাঙ্গ কলাম লেখার সুযোগটুকুও দিলো না, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিল এর আগেই, পল্টি নিয়ে চোখের সামনে দেখিয়ে দিলো এরশাদসুলভ মুড সুয়িং। পল্লিবন্ধু এভাবেই যুগ-যুগ বেঁচে থাকবেন ছাত্র অধিকার পরিষদের পল্টিবন্ধুদের মাঝে। পল্টিবন্ধু খেতাবটা ছাত্র অধিকার পরিষদের কোন নেতা নেবে, এ নিয়ে মেসেঞ্জারে গ্রুপে বাকবিতণ্ডা না হলেই হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নুর বা রাশেদ এই সামান্য ব্যাপার নিয়েও বিতণ্ডা করার মতো দুশ্চরিত্রহীন ছেলে না।
লেখক: কবি (লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
ভোরের পাতা/পি