বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন, শেখ হাসিনা তা রক্ষা করেছেন: মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার। #শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাঙলার দ্বারপ্রান্তে এসেছি: ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া।
আজকে একটি কথা কেউ খণ্ডিত করতে পারবে না যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলাদেশকে সৃষ্টি করেছেন ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন। আমাদের উচিৎ বাংলাদেশকে এই পথে রাখতে হলে এই যে উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্ম নিরপেক্ষতা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাখতে হবে। এতেই বাংলাদেশের উন্নতি সমৃদ্ধি নির্ভরশীল, তাতেই বাংলাদেশের যে নতুন প্রজন্মের যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে সেটি আরও প্রসারিত হবে। দেশে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে সেটা যদি বজায় রাখা যায়, তাহলে আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ আছে দেশকে আরও অনেক দূরে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৩৫৫তম পর্বে রোববার আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনারারি কনস্যুলেট, জার্মান দূতাবাস, ফর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, এটা আজকে অবধারিত সত্য এবং যুক্তি ধাঁরা এই কথাটি কেউ খণ্ডিত করতে পারবে না যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলাদেশকে সৃষ্টি করেছেন ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা এই রাষ্ট্র ও রাজনীতির সঙ্গে ৪০বছর ধরে আছেন। তিনি যে আছেন সেটা বললে অনেকটা কম হয়ে যায়। তাঁর উপস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতিতে এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য কত সম্ভাবনার দ্বার খুলে রাষ্ট্রকে একটি সম্ভাবনাময় জায়গায় নিয়ে এসেছেন; সেগুলো যদি আমরা দেখি সেটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়। তিনি যখন ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরলেন তখনকার বাংলাদেশের চিত্র ও আজকের বাংলাদেশের চিত্রটা দেখেন তাহলে আমরা ব্যাপক তফাৎ দেখতে পাবো। এই দুই সময়ে কিন্তু অভাবনীয় কাজ করেছেন তিনি। শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেওয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৩৬ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে শেখ হাসিনার শ্রেষ্ঠত্ব ও তাঁর দর্শনের গ্রহণযোগ্যতা দেশের মানুষের কাছে সকল সময়ের সীমা অতিক্রম করেছে। প্রকৃতপক্ষে ১৭ মে এদেশের ইতিহাসের মাইলফলক। সেদিন থেকেই দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে দ্রুত দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। দারিদ্র্যদূরীকরণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে উন্নত দেশগুলোকেও টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধির অর্থ হলো অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। ১৯৭১ সালে ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ে শুরু করা বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। একজন গবেষক হিসেবে, একজন বিশ্লেষক হিসেবে, একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে সেখান থেকে বলতে পারি যে, বাংলাদেশ সফল রাষ্ট্র, আমাদের এখনো অনেক কিছু করতে হবে, অনেক চ্যালেঞ্জ আছে আমাদের সামনে কিন্তু এই যে শেখ হাসিনার জায়গা থেকে রাজনীতিতে এবং রাষ্ট্রের জন্য কাজগুলো করে নেতৃত্ব দিয়ে এখন পর্যন্ত যা যা করেছেন সেটা নিয়ে যদি আমরা বিশ্বের অন্য কোন নেতার সঙ্গে তুলনা করতে যায়, তাহলে আমি তুলনা করার জন্য কাউকে খুঁজে পাইনা। এখন আমাদের উচিৎ বাংলাদেশকে এই পথে রাখতে হলে এই যে উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাখতে হবে। এতেই বাংলাদেশের উন্নতি সমৃদ্ধি নির্ভরশীল, তাতেই বাংলাদেশের যে নতুন প্রজন্মের যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে সেটি আরও প্রসারিত হবে।
ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার বাস্তবায়নে আপসহীন লক্ষ্য নিয়ে শত নির্যাতন, জেল-জুলুম, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার এক দুর্দম লড়াই করেন। সুদীর্ঘ ২৩ বছরের লড়াই সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখো প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতাবিরোধী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাসের নৃশংসতম অধ্যায় সৃষ্টি করল। এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় পাকিস্তানি ভাবাদর্শে শাসকদের অধিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশ যেন কোনো অবস্থাতেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, শোষণহীন রাষ্ট্রব্যবস্থারূপে গড়ে উঠতে না পারে। সেদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৭২ সালের ১৫ আগস্টের পরেই কিন্তু শেখ হাসিনা সেদিন দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। উনি কিন্তু সেসময় জার্মানিতে ছিলেন। উনি কিন্তু যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তখনকার সময়ে দেশে স্বাধীনতা বিরোধী সরকার তাকে দেশে ঢুকতে দেয়নি। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কিভাবে মানসিকভাবে এতো বিধ্বস্ত করার পরও তিনি কিভাবে দাঁড়িয়ে আছেন! একটা মানুষকে কিভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করার পরেও তিনি যেভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন সেটা কল্পনা করা যায় না। উনি যখন ৩২ নম্বরের বাড়িতে গেলেন সেখানেও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি আমি যে একটু মিলাদ পড়াব বা বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন সেই সুযোগও তৎকালীন সরকার জিয়াউর রহমান দেয়নি। স্বাধীনতার যে সুফল বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে দিয়ে গেছেন সেটার সুফল কিন্তু আজকে আমরা আস্তে আস্তে ভোগ করিছি। একসময় আমরা বাজেটের ৬০ থেকে ৬৫% বৈদেশিক সহযোগিতার উপর নির্ভর করতাম এখন সেটা অনেক কমে গিয়েছে। এখন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম যে, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রকে লোন দিচ্ছি। তার মানে কি, আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাঙলার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছি। আজকে ধর্মনিরেপক্ষ এই নীতির কারণেই কিন্তু আজকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, আইসিটি খাতে অনেক দূরে এগিয়ে এসেছি। সাথে দেশে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে সেটা যদি বজার রাখতে পারি তাহলে আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ আছে, দেশকে আরও অনেক দূরে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।