প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১, ৯:৫০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রথম রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলা ও ১৫৮টি সাধারণ ডায়েরীর বাদি মো. আবু তাহের উদ্দিন আমিরী (৪৪) এখন নিরাপত্তা হীনতায় রয়েছেন। এই রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলা করে এ পর্যন্ত তাঁর পরিবারের ১১ সদস্যকে মেরে ফেলা হয়েছে। একই সাথে এ পর্যন্ত পরিবারের ১৭ সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। সর্বশেষ শেখ রাসের স্মৃতি সংসদের নামে বসানো তাস ও জুয়ার আসরের প্রতিবাদ করায় তার উপর হামলার প্রেক্ষিতে পুনরায় মামলা দায়ের করায় তিনি নিরাপত্তা হীনতায় রয়েছেন।
আবু তাহের আমিরী রাউজান গহিরার এয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ির বাসিদা হলেও বর্তমানে বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদন্ডীর ৬ নং ওয়ার্ড বহদ্দার পাড়ার আবু তৈয়বের ভাড়া ঘরে বসবাস করে আসছেন। এডিশনাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালত, চট্টগ্রামে আবু তাহের সর্বশেষ মামলায় (নং-৮১/২০২১) আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ায় তাকে প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
আসামীরা হলেন, বোয়ালখালী পৌরসভার মীরপাড়ার মৃত আবু তালেবের পুত্র মো. নাছের আলী (৪৮), মো. ওয়াইদার আলী (৩৬), মৃত হাছি মিয়ার পুত্র মাহবুবুল আলম (৩২), মাহাবু আলম (৩০), মৃত আমিনুল হকের পুত্র মো. শহীদুল আলম (৩৮), ৫ নং ওয়ার্ড মীরপাড়ার নুরুল হকের পুত্র শামসুর আলম (৩৬) সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন। একই সাথে এসব আসামীরা প্রকাশ্য ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছেনা বলে তার অভিযোগ। আবু তাহের আমিরী বাবা হলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. মমতাজ উদ্দিনের পুত্র ও মা বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুমা রাশেদা বেগম। সেই সুবাধে তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী মোটর চালক লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ও কেদ্রীয় কমিটির সিনিয়র যগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে রাউজানের বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের প্রকাশ সাকা চৌধুরীর তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁদের পরিবার নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় আবু তহের আমিরী মামলা করেছিলেন। ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে ইতিহাসের প্রথম রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলা দায়ের করলে আদালত বাদীর মামলা আমলে নিয়ে সাকার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে আবার এ ঘটনার বিরুদ্ধে ২ বছর পরে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলা দায়ের করেন সরকার। একই সাথে রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলার প্রথম স্বাক্ষী নিয়োগ করা হয়। এরপর থেকে তাহেরকে বার বার হত্যা চেষ্টা করা হয়। যার ফলে আবু তাহের বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার হয়ে বিভিন্ন থানাতে সাকা চৌধুরী, তার পরিবার ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ১৫৮টি জিডি করেন। এরপর থেকে বাদির পরিবারের ১৭ জন সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন।
সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ রাত ১০ টায় বোয়ালখালী উপজেলার থানা সদরের তৃতীয় তলায় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদে আবু তাহের গিয়ে দেখেন আসামীরা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের নামে তাস ও জুয়ার আসর চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে এ আসর বসানোর প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় তাকে হত্যার হুমকির পাশাপাশি তার শিশু কন্যাকে অপহরণেরও হুমকি দেয়া হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে পুনরায় মারধর করা হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরেরদিন বিকেল সাড়ে ৫ টায় বহদ্দারপাড়া খায়ের মঞ্জিল সংলগ্ন ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী এবং বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ বোয়ালখালী উপজেলার সভাপতি আবু তৈয়বের উট প্রতীতের সমর্থনে নির্বাচন অফিসে গেলে বোয়ালখালী এসি ল্যান্ড ১ নং আসামীর মোবাইল নাম্বার দিতে বলেন। আবু তৈয়ব মোবাইল নাম্বার দিলে এসি ল্যান্ড যাওয়ার পর দুই জনকে মারধর করেন আসামীরা। এ সময় এক লক্ষা টাকা চাঁদা না দিলে এলাকা ছাড়তে বলা হয়। পরে এদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে আবু তাহের আমিরী বলেন, সাকার চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর বিভিন্ন সময় আমার উপর হামলার ঘটনা ঘটে। আমাকে বার বার মেরে ফেলতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য আরো ১৫৮ টি জিডি বিভিন্ন থানায় দায়ের করি। বর্তমানে আমার সর্বশেষ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে আসামীরা আমাকে বার বার মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তবে পুলিশ নিশ্চুপ রয়েছেন। আসামীরা প্রকাশ্য ঘোরাফেরা করছেন। আমি চরম নিরাপত্তা হীনতায় আছি।
ভােররে পাতা/পি